৫০ হাজারে হরিণ, ২৫ হাজার টাকায় মিলছে ময়ূর
২০ জুন ২০২৪ ১২:২৬
ঢাকা: জাতীয় চিড়িয়াখানায় নিয়মিতভাবে হরিণ ও ময়ূর বিক্রি করা হচ্ছে। একজন সাধারণ নাগরিক বন বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে ৫০ হাজার টাকায় প্রতিটি হরিণ কিনতে পারবেন। প্রতিটি ময়ূর ২৫ হাজার টাকা কিনতে পারবেন। তবে ময়ূর কিনতে হলে কারো অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
সর্বশেষ সাত অর্থবছরে হরিণ ও ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে দুই কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩৯৯টি হরিণ বিক্রি করে আয় হয়েছে দুই কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ২৪৩টি ময়ূর বিক্রি বাবদ আয় ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ছয় বছর ১০ মাসে হরিণ আর ময়ূর বিক্রি করে উল্লেখিত অর্থ আয় করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকেলে জাতীয় চিড়িয়াখানা পরিচালক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা লাভ করার উদ্দেশ্যে নয় মূলত দর্শকদের বিনোদনের জন্য করা। তারপরেও এখানে আয় বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। এ বিষয়ে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রতি বছর চিড়িয়াখানায় সরকারের গড়ে খরচ হয় ১৯ থেকে ২০ কোটি টাকা।
ডা. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, চিড়িয়াখানায় প্রতিবছর ইজারা গেইট, পার্কিং, শিশুপার্ক, জাদুঘর এবং গাছের ফলমূল বিক্রি ২৫ কোটি টাকার মতো আয় হয়। গত বছর ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। তবে এবার গেইট ইজারা দেওয়া হয়েছে ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এছাড়াও প্রতি বছর হরিণ ও ময়ূর বিক্রি কিছু কিছু অর্থ আয় হয়। চলতি বছর সাত লাখ ৩০ হাজার টাকার কাঠাল বিক্রি করা হয়েছে।
যেভাবে হরিণ কেনা যাবে: প্রতিটি হরিণ ৫০ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ছয় বছর ১০ মাসে চিড়িয়াখানা থেকে ৩৯৯টি হরিণ বিক্রি করা হয়েছে। প্রতিটি হরিণের মুল্য ৫০ হাজার টাকা। এটি সরকার নির্ধারিত। হরিণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে বন বিভাগের অনুমোদন সাপেক্ষে হরিণ বিক্রি করা হয়। কোনো ব্যক্তি যখন বন বিভাগ থেকে পারিবাবিকভাবে হরিণ পরিপালন করতে পারবেন, এমন লাইসেন্স থাকা সাপেক্ষে হরিণ বিক্রি করা হয়। তবে এক সময় প্রতিটি হরিণ ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করা হলেও গত কয়েক বছর ধরে ৫০ হাজার টাকা করে প্রতিটি হরিণ বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রি করা প্রতিটি হরিণ প্রাপ্ত বয়স্ক। সর্বশেষ ছয় বছর ১০ মাসে ৩৯৯টি হরিণ বিক্রি করে সরকারের আয় দুই কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
যেভাবে ময়ূর কেনা যাবে: অন্যদিকে ময়ূরের ক্ষেত্রে কোনো লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। কোনো ব্যক্তি ময়ূর কেনার জন্য অবেদন করলে, স্টক থাকা সাপেক্ষে তার কাছে ময়ূর বিক্রি করা হয়। প্রতিটি ময়ূরের দাম ২৫ হাজার টাকা। এই অর্থ সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমেও দেওয়া যাবে। আবার সরাসরি চিড়িয়াখানার ভেতরে ক্যাশ শাখায় টাকা জমা দিয়ে রশিদ নিয়েও হরিণ কিংবা ময়ূর কেনা যাবে। সর্বশেষ ছয় বছর ১০ মাসে ২৪৩টি হরিণ বিক্রি করে সরকারের আয় ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
কোন বছরে কত হরিণ বিক্রি: ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ৭০ হাজার টাকা করে ৭টি হরিণ বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে একই দামে ৯টি হরিণ বিক্রি করা হয় ছয় লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আটটি হরিণ বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ২৫টি হরিণি বিক্রি করা হযেছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এদিকে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রতিটি হরিণের দাম ২০ হাজার টাকা কমিয়ে ৭০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪৩টি হরিণ প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা করে বিক্রি করে এক কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৭৫টি হরিণ বিক্রি করে সরকারের আয় ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সর্বশেষ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে অর্থাৎ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৩২টি হরিণ বিক্রি করে সরকারের আয় ১৬ লাখ টাকা।
কোন বছরে কত ময়ূর বিক্রি: ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ২৫ হাজার টাকা করে ১৭টি ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ২৩টি ময়ূর বিক্রি করা হয় পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ১৩টি ময়ূর বিক্রি হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা। আর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাত্র দুটি ময়ূর বিক্রি হযেছে ৫০ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৬টি ময়ূর প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে ২৯ লাখ টাকা আয় করা হয়েছে। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৬টি ময়ূর বিক্রি করে সরকারের আয় ৯০ হাজার টাকা। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে অর্থ্যৎ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৬টি ময়ূর বিক্রি করে সরকারের আয় ৯ লাখ টাকা। ফলে সর্বশেষ ছয় বছর ১০ মাসে ২৪৩টি ময়ূর বিক্রি করে চিড়িয়াখানার আয় ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য দর্শনার্থীর বিনোদন, দুর্লভ ও বিলুপ্ত বন্যপ্রাণী সংগ্রহ ও প্রজনন, শিক্ষা, গবেষণা প্রাণী বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনাতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬১ সালে রাজধানীর মিরপুর ঢাকা চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটি ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ১৩৭টি প্রাজাতীর প্রাণীর সংখ্যা তিন হাজার ২৭৫টি।
সারাবাংলা/জিএস/ইআ