জলহস্তী কিনতে চান? পকেটে থাকতে হবে ৪০ লাখ
২১ জুন ২০২৪ ২০:৩২
ঢাকা: বাঘ-সিংহের মতো দাপুটে প্রাণীর পাশাপাশি হরিণ-ময়ূরের মতো প্রাণীর খাঁচার সামনে চিড়িয়াখানায় একটু বেশিই ভিড় থাকে। এগুলোর চঞ্চলতা আকৃষ্ট করে মানুষকে। তবে এর বাইরেও একটি খাঁচার সামনে বেশ ভিড় দেখা যায়, যেখানে কি না দেখা মেলে অলস সৌন্দর্যের। দেড় হাজার কেজি আকৃতির বিশাল এক দেহ নিয়ে হেলেদুলে বেড়াচ্ছে একটি প্রাণী, যেটি কি না মুখটা খুলে হা করলে মনে হয় সেখানে আস্ত একটা মানুষ এঁটে যাবে!
বলছি জলহস্তীর কথা। জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিশাল এক শেডে জল আর স্থল মিলিয়ে দেখা যাবে এমনই কিছু জলহস্তীকে। এদের কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা শরীর পানিতে ডুবিয়ে বসে আছে কেবল মাথাটা তুলে। কেউ কেউ ঠাঁই দাঁড়িয়ে। ক্ষুধার্ত জলহস্তীগুলো একেক গ্রাসে গিলে নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ খাবার।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় এখন দেখা মিলবে এমন ১৩টি জলহস্তীর। তবে সেগুলোকে নিয়ে কিছুটা বেগও পেতে হচ্ছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। কারণ জলহস্তীর জন্য চিড়িয়াখানায় যে নির্ধারিত শেড, তাতে এতগুলো জলহস্তীকে রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত স্থান। বলা যায়, স্থান সংকুলান না হওয়ায় জলহস্তীগুলোকে থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে! আর এ সংকটের সমাধানে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অর্ধেক জলহস্তীই তারা বিক্রি করে দেবে!
হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। এবার জলহস্তীই বিক্রি করতে যাচ্ছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। হরিণ ও ময়ূর চিড়িয়াখানা থেকে বিক্রি হয়ে আসছে আরও আগে থেকেই। এবারই প্রথম সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে জলহস্তী। তবে ময়ূর-হরিণের মতো এগুলো ২৫-৫০ হাজার টাকায মিলবে না। দাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও চিড়িয়াখানার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে ধারণা মিলল, একেকটি জলহস্তী কিনতে হলে লাগতে পারে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা! এক নজরে টাকার অঙ্কটা বিশাল মনে হলেও এমন দশাসই আকৃতির একটি প্রাণীর জন্য সেটি খুব বেমানানও নয় হয়তো!
অন্যান্য বছরের মতোই এ বছরও ঈদুল আজহার ছুটিতে ঢল নেমেছিল জাতীয় চিড়িয়াখানায়। সে চিত্র সরেজমিনে দেখতে গিয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালকের সঙ্গে কথা বলতেই জানা গেল জলহস্তী বিক্রির পরিকল্পনার কথা। পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বলছিলেন, চিড়িয়াখানায় থাকা ১৩টি জলহস্তী একদিকে পরিমাণের তুলনায় বেশি, অন্যদিকে এদের স্থান সংকুলান করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সে কারণেই বিক্রির পরিকল্পনা। কিংবা অন্য কোনো চিড়িয়াখানার সঙ্গে জলহস্তী বিনিময়ও করা হতে পারে।
আরও পড়ুন- ৫০ হাজারে হরিণ, ২৫ হাজার টাকায় মিলছে ময়ূর
চিড়িয়াখানা চাইলেই অবশ্য জলহস্তীগুলো বিক্রি বা বিনিময় করতে পারবে না। এর জন্য অনুসরণ করতে হবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া। প্রথমত অনুমতি লাগবে চিড়িয়াখানা যে মন্ত্রণালয়ের অধীন সেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি। মন্ত্রণালয় অনুমতি দেওয়া পাশাপাশি জলহস্তী বিনিময় বা বিক্রির জন্য মূল্য নির্ধারণ করতে একটি কমিটি গঠন করবে। সেই কমিটি মূল্য নির্ধারণ করলে সেটি আবার অনুমোদন পেতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সেই অনুমোদনের পর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্ধারণ করা মূল্য জানিয়ে জলহস্তী বিক্রি করতে বলবে চিড়িয়াখানাকে।
চিড়িয়াখানার পরিচালক জানালেন, এরই মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদক মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, পরবর্তী ধাপগুলো সম্পন্ন করতে মন্ত্রণালয় খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে।
জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা জলহস্তী প্রজননের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। এখান থেকে এর আগেও দেশের বিভিন্ন সাফারি পার্ক এবং চট্রগ্রাম ও রংপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তী সরবরাহ করা হয়েছে। তারপরও এখন জাতীয় চিড়িযাখানায় ১৩টি জলহস্তী রয়েছে, যা চিড়িয়াখানার জলহস্তীর শেডের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেকটা বেশি। ফলে এখান থেকে আমরা ছয়টি জলহস্তি বিক্রি করার কথা ভাবছি।’
‘এই ছয়টি জলহস্তী অন্য কোথাও বিক্রি করতে পারলে বা কারও সঙ্গে বিনিময় করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো, জলহস্তীদের জন্যও ভালো। কেননা ছয়টি জলহস্তী বিক্রি করা গেলে বাকি জলহস্তীরা এখানে খোলামেলা পরিবেশ পাবে। আবার যারা বিক্রি হয়ে যাবে, তারাও কিন্তু এখানকার চেয়ে খোলামেলা পরিবেশই পাবে। ওরা ভালোই থাকবে। আবার এখানে যারা থাকবে, তাদের প্রজননের ফলে আমরা কিন্তু আরও জলহস্তী ভবিষ্যতে পাব,’— বলেন ডা. রফিকুল।
প্রতিটি জলহস্তির দাম কত হতে পারে— এমন প্রশ্নে চিড়িয়াখানা পরিচালকের উত্তর, ‘কত মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করা হবে, সেটা নির্ধারণ করার জন্য মন্ত্রণালয় (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়) একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি বসে দাম নির্ধারণ করবে। এখান থেকে যে জলহস্তীগুলো বিক্রি করা হবে, সবগুলোই প্রাপ্তবয়স্ক। সে ক্ষেত্রে আমি যতটুকু ধারণা করতে পারি, একেকটি জলহস্তীর দাম ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে।’
জলহস্তী এবার প্রথম বিক্রির সিদ্ধান্ত হলেও জাতীয় চিড়িয়াখানা হরিণ ও ময়ূর বিক্রি করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই। চিড়িয়াখানার তথ্য বলছে, গত সাত অর্থবছরে ৩৯৯টি হরিণ বিক্রি করে চিড়িয়াখানা আয় করেছে দুই কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২৪৩টি ময়ূর বিক্রি করে আয় করেছে ৬০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এই দুই প্রাণী বিক্রি বাবদ চিড়িয়াখানার আয় দুই কোটি ৭৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
হরিণ ও ময়ূর বিক্রির কার্যক্রম এখনো চলমান রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। বন বিভাগের অনুমোদন নিয়ে যে কেউ একটি হরিণ কিনতে পারবেন ৫০ হাজার টাকায়। তবে ময়ূর কিনতে কারও অনুমোদন লাগবে না, শুধু খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা।
কিনবেন নাকি হরিণ, ময়ূর কিংবা জলহস্তী!
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
চিড়িয়াখানা জলহস্তী জলহস্তী বিক্রি জাতীয় চিড়িয়াখানা ময়ূর হরিণ