Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুরের ‘শ‍্যামা সুন্দরী’ খাল এখন ডেঙ্গুর প্রজননকেন্দ্র

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২২ জুন ২০২৪ ২২:৪৪

রংপুর: বায়ুবাহিত রোগ থেকে পরিত্রাণ ও জলাবদ্ধতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ১৮৯০ সালে খনন করা ‘রংপুরের ফুসফুস’ বলে পরিচিত শ্যামা সুন্দরী খাল এখন ডেঙ্গুর প্রজননকেন্দ্র। শুধু তাই নয়, এই খাল যেন এখন নগরবাসীর আতঙ্কের নাম। মশা প্রজননের কারখানা নামে পরিচিতি পাওয়া এই খালের কারণে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ খালের সেবা-শুশ্রূষা না করলে গতবারের মতো এবারও অধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেই হতে পারে বিয়োগান্ত ঘটনাও। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, নগরবাসীর সুরক্ষা নিশ্চিতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ডেঙ্গু মোকাবিলার কার্যক্রমের পাশাপাশি শ্যামাসুন্দরী খাল পরিষ্কার, জনগণকে সচেতন করতে প্রচার-প্রচারণা, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিছন্নতা অভিযান পরিচালনা চলমান রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গেল কয়েকবছর থেকে রংপুরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে নগরবাসী ছিলো আতঙ্কের মধ্যে। গতবছর ডেঙ্গুতে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় এবারও ডেঙ্গু নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে জনমনে। রংপুর নগরীর ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া শ্যামা সুন্দরী খালটি ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হওয়ায় খালটি এখন এডিসসহ নানা ধরনের মশার প্রজননের উর্বর ভূমি। এখানে দুর্গন্ধময় বিষাক্ত কালো পানিতে গা ভাসিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে মশা। সাথে আগাম বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায়ও আছে মশার মিছিল। এছাড়াও নগরজুড়ে স্থবির হয়ে পড়ে থাকা উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের খোলসেও দেখা মিলছে মশার উপদ্রব।

নগরীর ১৫ ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বেশি

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৫ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং স্থানভেদে ২৩ থেকে ৯০ ফুট প্রশস্ত শ্যামাসুন্দরী খালটি সিটি এলাকার উত্তর–পশ্চিমে কেল্লাবন্দ এলাকার ঘাঘট নদ থেকে শুরু হয়ে নগরের মাঝ দিয়ে ধাপ, পাশারিপাড়া, কেরানীপাড়া, মুন্সীপাড়া, ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সেনপাড়া, মুলাটোল, তেঁতুলতলা, শাপলা চত্বর, নূরপুর, বৈরাগীপাড়া হয়ে মাহিগঞ্জ সাতমাথা রেলগেট এলাকায় কেডি ক্যানেল স্পর্শ করে খোকসা ঘাঘট নদে মিশেছে। ২০৪ বর্গ কিলোমিটারের বিস্তৃত এলাকায় ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন। মূলত ১৫টি ওয়ার্ড ঘেষে শ্যামাসুন্দরী খালের প্রবাহ থাকায় এসব এলাকা গেল কয়েক বছর থেকেই ডেঙ্গুর রেড জোনে রয়েছে। গেল বছরে ওই সব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে পাওয়ায় এবারও এডিসের আশংকা রয়েছে বংশ বিস্তারের। তবে এডিস মশার লার্ভা নিধনে সিটি করপোরেশনের অভিযান আবারও পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

বিজ্ঞাপন

রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, গতবছর নগরীতে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার অভিযান চালানো হয়েছিলো। প্রাথমিকভাবে নগরবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। সামনে আবারও অভিযান চলমান থাকবে, লার্ভা শনাক্ত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিগত বছরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা

বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ৪ জুলাই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান বুলেট লাল। পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা বুলেট ঢাকায় একটি সরকারি অফিসে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বুলেট।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন, ডেঙ্গু অতীতে ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকলেও গেল এবছর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এবছর এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা না হলে আগামী বছরগুলোতে সারা দেশে ডেঙ্গু ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস এবং জনসচেনতা সৃষ্টি করা জরুরী। এডিস মশাকে ফগিং করে এবং রিপ্লেন্ট ও এরোসলের মাধ্যমে মেরে ফেলতে হবে।

তিনি বলেন, ডেঙ্গু সংক্রমনের দায় প্রধানত নাগরিক, সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকারের। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য জনগণকে সচেতন থাকতে হবে এবং এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। কেনো না ডেঙ্গুর বিষয়ে সচেতন না বলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব স্থায়ী হবে।

সিটি করপোরেশন থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রস্তুতি

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান ইবনে তাজ বলেন, সিটি করপোরেশন, সিভিল সার্জন অফিস, স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরা সচেতনতা মূলক প্রচারণা এবং ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রেখেছি। বর্ষা মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা যেন না হয় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহানগরীর নালা-নর্দমা, আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মশা-মাছির প্রজনন স্থল ধ্বংসে লার্ভিসাইডিং এবং মশা নিধনে ফগিং করা হয়েছে। এডিস মশা যাতে জন্মাতে না পারে সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। শ্যামাসুন্দরী খাল পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন থীক বিনামূল্যে ডেঙ্গু টেস্ট করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো জরিপ বা গবেষণা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে কীটতত্ত্ববিদ না থাকায় গবেষণা বা জরিপ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে সিভিল সার্জন বিভাগ থেকে প্রতিবছরই গবেষণা ও জরিপ করা হয়।’

সার্বিক বিষয়ে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সিটি করপোরেশন ও স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন বিডি ক্লিনের যৌথ উদ্যোগে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শ্যামাসুন্দরী খালের পাঁচ কিলোমিটার এক দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।’

পরিচ্ছন্নতার সুফল সম্পর্কে নগরবাসীকে বেশি করে সচেতন করতে সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পর শ্যামাসুন্দরী খালে নতুন করে যেন ময়লা ফেলা না হয়, এ জন্য নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী জানান, গত বছরের ৪ জুলাই রমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত রংপুর ভালো অবস্থানে আছে। তবে কেউ আক্রান্ত হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা এসে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাবেন।

আরও পড়ুন
বছরব্যাপী কার্যক্রম, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখার আশাবাদ রাসিকের
খুলনা সিটির দাবি ডেঙ্গু প্রতিরোধে তৎপর, নগরবাসীর দ্বিমত
বর্ষা শুরু, মশার উৎপাতে ডেঙ্গুর শঙ্কা— তবু হাত গুটিয়ে চসিক

সারাবাংলা/একে

এডিস মশা ডেঙ্গু ডেঙ্গু মৌসুম

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর