‘চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা মাথা ব্যাথার কারণ’
২৩ জুন ২০২৪ ১৭:৪৫
ঢাকা: দেশে বতর্মানে যে পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা ৪৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে বিদ্যুতের এই অতিরিক্ত উৎপাদন দেশের জন্য বড় মাথা ব্যথার কারণ। এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা বলেন, সক্ষমতা বেশির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা যাচ্ছে সরকারের তহবিল থেকে।
রোববার (২৩ জুন) রাজধানীর মহাখালীতে ব্রাক ইন সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্ধ নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার উপস্থাপনায় বলেন, ‘দেশে এখন বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ব্যবহার করা না গেলেও কেন উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এখন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করেছে, তা ২০৩০ সালেও প্রয়োজন হবে না। এখন থেকে ছয় বছরে চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ২৫ শতাংশ রিজার্ভ ধরলে তখন ২৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হলেই হয়।’
মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সক্ষমতা বাড়লেও এখনো দেশে লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে গড়ে ১১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। ময়মনসিংহ, খুলনায় এবং সিলেটে লোডশেড বেশি করা হয়। বাজেটে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত নিয়ে স্পষ্ট কিছু নেই। সরকার এই খাত নিয়ে কী করবে সেটা নিয়েও অন্ধকারে সবাই।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এ কে আজাদ, এমপি বলেন, ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাসের কথা বলে দাম বাড়ানো হলো। কিন্তু লোডশেডিং কমেনি। ৭/৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। ডিজেল দিয়ে সিএনজি স্টেশন থেকে গ্যাস এনে কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়ে গেছে। অনেক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ না থাকায় দেশে বিনিয়োগ আসছে না। প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে ক্যাপিটেল মেশিনারিজ আমদানি। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটের অধিকাংশ ব্যয় অনুন্নয়ন খাতে। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য হাজার কোটি টাকা খরচ করে দামি গাড়ি কেনা হচ্ছে। যেখানে ভারতের মন্ত্রীরা নিজেদের দেশের গাড়িতে চড়েন।’ তিনি বলেন, ‘নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকলে কর্মসংস্থান হবে না।’
এ কে আজাদ আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৮ হাজার মেগাওয়াট পার করেছে। এতে জিডিপি বেড়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ।’
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে সুবিধা মিলছে না। কারণ, ডলারের দাম বেশি।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম একটি আধুনিক জ্বালানি নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, ‘শুধু জোড়াতালি দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এজন্য একের পর এক মাস্টার প্ল্যান ফেল করছে।’ বিদ্যুৎ খাতের বিশেষ বিধান বাতিলের পরামর্শ দেন তিনি। এ সময় বেশি দামে সৌর বিদ্যুতের চুক্তির সমালোচনা করে সেখানেও কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন ম. তামিম। পাশাপাশি তিনি বিইআরসিকে শক্তিশালী করার কথাও বলেন।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিপিসি (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের নামে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি সমন্বয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিপিসির দুর্নীতি প্রমাণ হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা ছাড়াই বিদ্যুৎ কিনছে। আবার কমিশনকে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়াচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা, বিদেশ ভ্রমণ, ঘুষের টাকা, কমিশন সবই জনগণের টাকা থেকে মেটানো হচ্ছে। এরপরও জনগণের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের কথা শোনা হচ্ছে না। ফলে এই বাজেট এলেই কী আর গেলেই কী, তাতে কারও কিছু যায়-আসে না। বরং বাজেটে যত বেশি বরাদ্দ বাড়বে, তত বেশি লুট হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম