সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে সম্পদের বিবরণী নেওয়ার প্রস্তাব
২৬ জুন ২০২৪ ২৩:১১
ঢাকা: সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনের আগে যেভাবে প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে হয়, একইভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও চাকরিতে প্রবেশের আগে সম্পদের বিবরণী নেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। পাশাপাশি যে ব্যবস্থায় দুনীতি হচ্ছে সেই ব্যবস্থারও একটা পর্যালোচনার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
বুধবার (২৬ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ প্রস্তাব করেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছিলেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আজ ১৭ হাজার মানুষ মায়য়েশিয়ায় যেতে পারেনি। দিতে হয়েছে ১০০ মিলিয়ন ডলার। কি হচ্ছে, কেউ কিছু জানে না। এই যে ১৭ হাজার মানুষ মালয়েশিয়া যেতে পারল না, এটা নিয়ে কোনো কথা নেই। এই লোকগুলো জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছে। তাদের টাকা কোথায় গেল, তা নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, এভাবে একটা দেশের উন্নয়ন আসতে পারে না।’
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, ‘দুর্নীতির সাম্প্রতিক সময়ের কিছু ঘটনা আমরা দেখেছি। চিন্তাই করা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব দেন, তাদের বিরুদ্ধে দুনীতির অভিযোগ এসেছে। দুনীতির অভিযোগ ১০০ কোটি টাকার না, হাজার হাজার কোটি টাকা। উনারা বিমানবন্দর দিয়ে চলে গেছেন। কত লোককে বিমানবন্দরে থামানো হয়েছে, যেতে দেওয়া হয়নি, পরে আদালতের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়েছে। আজ বলা হচ্ছে, আদালতের অনুমতি ছিল বলেই তারা চলে গেছে। কেন আপনারা তাদের যাওয়া ঠেকাতে পারেননি?’
‘আজ সময় এসেছে এই দুর্নীতি নিয়ে, এই ব্যবস্থা নিয়ে একটা পর্যালোচনা করার। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের শাস্তি চাই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যবস্থায় এ রকম দুর্নীতি হতে পারে, সেই ব্যবস্থারও একটা পর্যালোচনা দরকার। আমি মনে করি এর জন্য একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন করা উচিত,’— বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
সরকারি চাকরিতে ঢোকার সময় সম্পদের বিবরণী দাখিলের প্রস্তাব রেখে বিরোধী দলের এই উপনেতা বলেন, আমরা যারা সংসদে আছি, আমরা কিন্তু একটা স্টেটমেন্ট দিয়ে আসি। সম্পদের বিবরণী আমাদের দিতে হয়, নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনকে। ঠিক সে রকম আজ যারা সরকারি চাকরিতে আসবেন, তাদেরও সেই স্টেটমেন্ট (সম্পদের বিবরণী) জমা দিয়েই সরকারি চাকরিতে ঢোকা উচিত। তাহলে তিনি যখন (চাকরি থেকে) বের হয়ে যাবেন, তখন সেই স্টেটমেন্ট মিলিয়ে দেখা যাবে।
বাজেট প্রস্তাবনায় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা করেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বলেন, আজ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে এই বাজেট। যারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে, এই জুন শেষে তাদের রিটার্ন দেওয়ার সময় হবে, রিটার্নে তারা ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সব টাকা সাদা করে নেবে। কেউ তাদের আর ধরতে পারবে না। আমি ৩০ শতাংশ (কর) দেবো, আর আপনি চুরি করে ১৫ শতাংশ (কর) দেবেন, এটা হতে পারে না। আমি মনে করি, এটা অনৈতিক।
ফের দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আনিসুল বলেন, দেশের জনগণ দেখছে কীভাবে দুনীতি হচ্ছে, কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো নষ্ট হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক সদস্য আছে। তারা সবাই তো দুর্নীতিবাজ না। কিন্তু সবার গায়ের ওপর গিয়ে (দুর্নীতিবাজের তকমা) পড়ছে, এটা বন্ধ করতে হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ টপ নিউজ দুর্নীতি সম্পদ বিবরণী সংসদ অধিবেশন