আসামি পলায়ন: ৫ জন বরখাস্ত, ঝুঁকিপূর্ণ কয়েদিদের স্থানান্তর
২৭ জুন ২০২৪ ২১:২৫
বগুড়া: বগুড়ায় ছাদ ফুটো করে কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামির পালানো ও গ্রেফতারের ঘটনায় পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি কারাগারের নিরাপত্তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় ঝুঁকিপূর্ণ কয়েদিদের রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
বুধবার (২৬ জুন) ভোরে ওই চার কয়েদি জেল থেকে পালান। পরে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বগুড়া কারাগার থেকে কয়েদিদের স্থানান্তর শুরু হয়েছে।
বগুড়া কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কয়েদি পালানোর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার বিষয় উঠে আসায় মোট আটজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত পাঁচজন হলেন— ডেপুটি জেলার হাসানুজ্জামান, সর্বপ্রধান কারারক্ষী ফরিদ উদ্দিন, প্রধান কারারক্ষী আব্দুল মতিন ও দুলাল হোসেন এবং কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম। জেল সুপার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আরও তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার
কারা সূত্র জানায়, কয়েদি পালানোর ঘটনায় কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পলাতকরা গ্রেফতার হয়ে আবার কারাগারে ফেরার পর বুধবার রাত থেকেই তাদের ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে পৃথক স্থানে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতি সেলের সামনে দুজন কারারক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন।
কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, কনডেম সেলগুলোর সামনে দুজন করেই কারারক্ষীর দায়িত্ব পালন করার ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দায়িত্ব পালন করতেন একজন করে কারারক্ষী। কয়েদি পালানোর ঘটনার পর আবার আগের নিয়ম ফিরিয়ে এনে দুজন করে কারারক্ষী নিযুক্ত করা হয়েছে।
তদন্ত চলছে
কয়েদি পালানোর ঘটনায় কারা অধিদফতর গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল বুধবারই কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দিনের মতো তদন্ত কমিটি জেলা কারাগারে তদন্ত কাজ চালিয়েছে। জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিও বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে কাজ শুরু করেছে।
এ ছাড়া কারাগার থেকে পালানোর বিষয়ে সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা জেলা কারাগার পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ রহস্য উদ্ঘাটনে মামলার আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা আদালতে রিমান্ডের আবেদন করবেন।
অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল সুজাউর রহমান বলেন, আমরা চার কয়েদির সঙ্গে কথা বলেছি। কীভাবে ঘটনা ঘটল, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। অবকাঠামোগত বা প্রশাসনিক কোনো দুর্বলতা ছিল কি না কিংবা কর্তব্যে অবহেলা ছিল কি না, সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ডিউটি রোস্টার ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়েছে কি না, সেগুলোও তদন্তের অধীন থাকবে। সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত শেষে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল কায়েশ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে তদন্ত শুরু করেছি। নিরাপত্তা, দায়িত্বে অবহেলাসহ এর সঙ্গে অন্য কোনো পক্ষের যোগাযোগ রয়েছে কি না, সবগুলো বিষয়ই তদন্তে উঠে আসবে।
অন্যদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুজন মিয়া বলেন, চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি। আদালত রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করলে সে অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে আসামিদের।
কয়েদিদের স্থানান্তর
কারা সূত্র জানিয়েছে, কয়েদি পালানোর ঘটনায় নিরাপত্তাব্যবস্থায় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে কি না, সেটি বিবেচনায় নিয়ে বগুড়া কারাগার থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কয়েদিদের স্থানান্তর শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই কারাগারের মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনসহ পাঁচ কয়েদিকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী কারাগারে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কারাগারের কনডেম সেল থেকে এই পাঁচ আসামিকে নেওয়া হয় রাজশাহী বিভাগীয় কারাগারে। তারা হলেন— মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নাঈম মন্ডল, শিবলু ফকির ও আবদুর রাজ্জাক এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম ও আবদুর রহিম। এর মধ্যে নাঈম, রাজ্জাক ও শিবলু কারাগারের কনডেম সেলে একসঙ্গে ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর
কয়েদি পালানো কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারের নিরাপত্তা বগুড়া সাময়িক বরখাস্ত