সাংবাদিকদের আয়কর বিষয়ে নোয়াবের বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ
১ জুলাই ২০২৪ ০০:১১
ঢাকা: সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর বিষয়ে নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) বক্তব্য শুনবেন আপিল বিভাগ।
রোববার (৩০ জুন) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার ড. সালাহউদ্দিন দোলন, ড. কাজী আকতার হামিদ, আইনজীবী এস.এম মাহিদুল ইসলাম সজিব, তোফায়েল আহমদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
ব্যারিস্টার ড. সালাহউদ্দিন দোলন শুনানিতে বলেন, ‘সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিক পক্ষ এযাবৎ কাল দিয়ে এসেছেন। সর্বশেষ নবম ওয়াজবোর্ডও এটি প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিকপক্ষ দেবেন এই সুপারিশ করেছেন। নবম ওয়েজ বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মন্ত্রিসভার একটি সাব কমিটি এটি সংবাদপত্র সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের দেওয়ার সুপারিশ করেন।’
তিনি জানান, এই সুপারিশের বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সুপারিশ বাতিল করে রায় দেন। বিষয়টি নিয়ে এর আগে আপিল বিভাগের রায় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সংক্ষুব্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ব্যারিস্টার ড. সালাহউদ্দিন দোলন আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের আয়কর সাংবাদিকরাই দিয়ে থাকেন। প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অনুকূলে সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের যে আয়কর হয় তা প্রান্তিক সুবিধা বা প্রিঞ্জ বেনেফিট হিসেবে দেন মালিকপক্ষ বা কর্তৃপক্ষ। এটি অষ্টম ওয়েজবোর্ড পর্যন্ত বহাল ছিল। নবম ওয়েজবোর্ডও তা বহাল রেখে সুপারিশ করে।’
ড. কাজী আকতার হামিদ শুনানিতে বলেন, ‘সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করেই নবম ওয়েজ বোর্ড সুপারিশ করেছেন।’ সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর প্রান্তিক সুবিধা হিসেবে মালিকপক্ষ দেবেন- এর পক্ষে তিনি আইনি রেফারেন্স উল্লেখ করেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস শুনানিতে আয়করের বিষয়টি নিয়ে মালিক পক্ষ নোয়াবের বক্তব্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে সরকার। সেই প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা হয়, ‘সব শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেওয়া হবে।’
একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, ‘সব শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’
অথচ প্রজ্ঞাপনে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন।
নবম ওয়েজবোর্ডের এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্যসচিব ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর একই বছরের ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন।
রুলে আয়কর ও গ্র্যাচুইটি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছিল। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।
পরে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সরকারের পক্ষে আবেদন করা হয়। এর পর গত বছরের ২৪ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন চেম্বার জজ আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেন।
এর পর গত ১৮ ফেব্রুয়ারি নোয়াবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুনতে চেয়ে তাদের প্রতি নোটিশ জারি করেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চ। একই সঙ্গে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এ মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখা হয়। শুনানির ধারাবাহিকতায় আজ আপিল বিভাগ এ বিষয়ে নোয়াবের বক্তব্য শোনার জন্য আগামীকাল দিন ধার্য করে দিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম