ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা, ঝুঁকিতে ৪০ হাজার পরিবার
১ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৮
বান্দরবান: বান্দরবানে তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে ৭ উপজেলায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৪০ হাজার পরিবার।
সরজমিনে জানা গেছে, বান্দরবানের সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপাপাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া; রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া; লামা উপজেলার হরিণমারা, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিমপাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রূপসীপাড়া; নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি পরিবারের অপরিকল্পিত বসবাস রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় পরিবারগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
অপরদিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণে বান্দরবান-রুমা রোডের ধলিয়ান পাড়া এবং ১২ মাইলের মাঝামাঝি স্থানে প্রধান সড়ক পাহাড় ধসে মাটি পড়ে বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা মাটি সরানোর ফলে ছোট গাড়ি চলাচল করেছে।
এদিকে টানা তিন দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নদীর পাড়ে থাকা ঘরবাড়িগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
বান্দরবান পৌরসভার বালাঘাটা ফজর আলী পাড়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী নুরুল আলম বলেন, ‘টাকার অভাবে কম দামে পাহাড় থেকে জায়গা কিনেছি। ঝুঁকি আছে জেনেও পাহাড়ের নিচে একটু জায়গা সমান করে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে থাকি।’
ইসলামপুরে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী বাসিন্দরা জানান, এই ঘর ছাড়া তাদের অন্য কোনো অবলম্বন নেই। তাই তারা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছেন।
বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত পরিমাণে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ে মাটির ওপরের স্থর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বের হয়ে আসে। এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় বর্ষায় ভারী বর্ষণে পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে পাহাড় ধসে পড়ে।’
বান্দরবান পৌরসভার মেয়র মো. শামসুল ইসলাম জানান, কয়েকদিনের টানা বর্ষণে পাহাড় ধস এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। পৌর এলাকায় ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আসবে তাদের জন্য শুকনো খাবারে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলো ছেড়ে লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে গতকাল থেকে শহরে মাইকিং করা হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দীন বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া আছে। ৭ উপজেলায় ২০৭টি স্কুল আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা সব বসবাসকারীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলায় পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরে মারা গেছে ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় মারা গেছে শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারা গেছে ৫ জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় মারা গেছে ২ জন, ২০১২ সালে লামা উপজেলার ফাইতং এলাকায় মারা গেছে ২৮ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মারা গেছে ১০ জন, ২০১৩ সালে সদরের কালাঘাটায় মারা গেছে ২ জন, ২০১৪ সালে সদরে মারা গেছে ৪ জন, ২০১৫ সালে জেলা সদরের বনরুপাড়ায় মারা গেছে ৩ জন, লামা উপজেলার হাসপাতাল পাড়ায় মারা গেছে ৬ জন, ২০১৭ সালের জেলা শহরে মারা গেছে শিশুসহ ৬ জন এবং ২০১৮ সালে নাইক্ষ্যংছড়িতে মারা গেছে ৩ জন এবং লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে একই পরিবারের তিনজনসহ ৪ জন, সর্বশেষ ২০২৪ সালে গত সপ্তাহে নাইক্ষ্যংছড়িতে পাহাড় ধসে মারা যান কৃষক।
সারাবাংলা/এমও