ইবির বাজেটের ৭৮% বেতন-ভাতায়, উপেক্ষিত গবেষণা-উদ্ভাবন
৬ জুলাই ২০২৪ ০৮:২২
কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১৮২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে তুলনায় চলতি অর্থবছরে বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে দুই কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তবে বাজেটের বেশির ভাগই চলে যাবে বেতন-ভাতা-পেনশনে। বরাবরের মতোই এবারও বাজেটে উপেক্ষা করা হয়েছে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতকে।
বাজেট বরাদ্দের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাজেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪২ কোটি ৬৩ লাখ ৫ হাজার টাকা। এই পরিমাণ মোট বাজেট বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ০৪ শতাংশ। অন্যদিকে অবহেলিত গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ মাত্র দুই কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এই পরিমাণ মূল বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
ইবির অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদিত বাজেটের মধ্যে ১৭৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব খাত থেকে আসবে ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বাজেটে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বিশেষ সুবিধা বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা মোট বাজেটের ৬৬ দশমিক ২২ শতাংশ।
এর বাইরে পেনশন বাবদ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এই অঙ্ক মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত ভাতাভোগীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাবদ ২৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ, পেনশন ও বিশেষ সুবিধা দিতেই ব্যয় হবে বাজেটের ৭৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
এদিকে বাজেটে গুরুত্ব পায়নি গবেষণা-উদ্ভাবন ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলো। গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে বাজেটের ১ দশমিক ৫২ শতাংশ বা দুই কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দের কথা আগেই বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তায় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের শূন্য দশমিক এক ৯ শতাংশ। ছাত্রকল্যাণ তহবিল বাবদ কোনো বরাদ্দই রাখা হয়নি।
এদিকে বাজেটে পণ্য ও সেবা (সাধারণ ও মেরামত) ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বাজেটে একক খাত হিসেবে এই খাতেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। এর বাইরে যন্ত্রপাতি অনুদান খাতে এক কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, বা বাজেটের শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ইবির বাজেটে যানবাহন বাবদ ৫২ লাখ টাকা (শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অনুদান বাবদ ৩৭ লাখ টাকা (শূন্য দশমিক ২ শতাংশ) এবং অন্যান্য মূলধন অনুদান বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৫০ লাখ টাকা (শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ) বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ পর্যালোচনায় চলতি অর্থবছরের বাজেটেও শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট খাতগুলো অবহেলার শিকার হয়েছে বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গবেষণা খাতে বরাদ্দ অর্থ আগের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন তারা। এই সামান্য বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা কোনোভাবেই পূরণ সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে ইবির অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চাহিদা দেওয়ার সময় আমরা মূল বাজেটের প্রায় ১০ থেকে ২৫ শতাংশ গবেষণা ও শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে দিয়ে থাকি। কিন্তু ইউজিসি না দিলে তো আমাদের কিছু করার নেই।’
জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়াতে বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফি থেকেই আসে। সেটা তো আর চাইলেই প্রশাসন বাড়াতে পারে না। ফলে বরাদ্দও দিন শেষে বাড়ে না।’
তবে বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুব বেশি কিছু করার থাকে না বলে মন্তব্য করেন ইবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মুঈদ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাজেট প্রণয়ণ একটি গতানুগতিক কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে তার খরচের আর্থিক হিসাবমাত্র। আর সেটি অনুমোদন করে ইউজিসি। একটি রাষ্ট্রের বাজেটের মধ্যে যেমন বিভিন্ন উদ্ভাবনী দিক থাকে, এটা সে রকম না। এখানে প্রশাসনের সৃজনশীল কিছু করার নেই।’
অর্থনীতির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিছু একটা করতে পারে না। গবেষণা খাতে চাইলেই তো আর সরকার বরাদ্দ দিয়ে দেবে না। তবে গবেষণা ও শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। চাহিদা দেওয়ার সময়ও এসব খাতে আরও বাড়িয়ে চাহিদা দেওয়া উচিত। দেওয়া না দেওয়া সরকারের বিষয়।’
সারাবাংলা/টিআর