Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শুরু আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জুলাই ২০২৪ ০০:০৮

ঢাকা: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হচ্ছে আজ রোববার (৭ জুলাই)। প্রতিবছর আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয়ে রথযাত্রা শেষ হবে ১৫ জুলাই উল্টা রথযাত্রার মধ্য দিয়ে। এ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) বরাবরের মতো এবারও বিশ্বশান্তিকল্পে অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পদাবলী কীর্তন, ধর্মীয় নাটক ও হরিনাম সংকীর্তনসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জগৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মুক্তিলাভ হয়। জীবরূপে তাকে আর জন্ম নিতে হয় না। এ বিশ্বাস থেকেই রথের ওপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমা রেখে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ৭ জুলাই সকালে বিভিন্ন মাঙ্গলিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হবে রথযাত্রার মূল অনুষ্ঠান। এর মধ্য রয়েছে হরিনাম সংকীর্তন, বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভগবত গীতা পাঠ, ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন।

ঢাকার স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) সকালে ইসকন আশ্রমে বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মাধ্যমে রথ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। দুপুরে স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে এক আলোচনা সভা হবে। সেখানে সরকারের মন্ত্রী, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আরও উপস্থিত থাকার থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রনয় ভার্মার। পরে সেখানেই রথযাত্রা উৎসবের উদ্বোধন হবে। ইসকনের স্বামীবাগ আশ্রমে বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞ ও আলোচনা সভা শেষে দুপুর ৩টায় সেখান থেকে রথসহ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শুরু হবে।

সুবিশাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহযোগে শ্রী শ্রী জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রা মহারানীর শ্রীবিগ্রহ স্বামীবাগ আশ্রম থেকে জয়কালি মন্দির মোড় ইত্তেফাক মোড় শাপলা চত্ত্বর দৈনিক বাংলা মোড় রাজউক ক্রসিং-গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল হাইকোর্ট মাজার দোয়েল চত্ত্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার জগন্নাথ হল-পলাশী-ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এসে শেষ হবে এবং ১৫ জুলাই (সোমবার) উল্টোরথ যাত্রার দিন একই পথে (বিপরীত দিকে) রথ ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রমে আনা হবে।

ইসকন স্বামীবাগ আশ্রমের আয়োজকরা জানান, রথযাত্রার দিন পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি নিরাপত্তার জন্য ইসকনের সেচ্ছাসেবক দল কাজ করবেন।

উল্লেখ্য, সনাতন ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রীজগন্নাথদেবের রথযাত্রা। ভারতে বঙ্গোপসাগরের পূর্বউপকূলে উড়িষ্যা (বর্তমান ওড়িশা) নামক রাজ্যে অবস্থিত পুরীর জগন্নাথ মন্দির। সেই শ্রীমন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরে রথে চড়ে ভগবান শ্রী জগন্নাথ দেবের যাত্রাই রথযাত্রা নামে অভিহিত। এ যাত্রার প্রধান তিন বিগ্রহ- জগন্নাথ (কৃষ্ণ), বলদেব (বলরাম) ও সুভদ্রা (শ্রীকৃষ্ণের ভগিণী ও যোগমায়াশক্তি)। সাধারণত তিনটি রথে এ তিন বিগ্রহ স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এর সাত দিন পর জগন্নাথদেব যখন গুণ্ডিচা মন্দির থেকে আবার তার শ্রীমন্দিরে ফিরে আসেন, তাকে বলা হয় উল্টো রথযাত্রা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন এই রথযাত্রা মহোৎসব।

রথযাত্রার সূচনা কবে থেকে তার সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ত্রয়োদশ শতাব্দীতেও রথযাত্রা উদযাপিত হতো- এমন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ‘রথ চকদ’ নামক প্রাচীন গ্রন্থ অনুসারে ৮ম শতাব্দীতে রাজা যযাতি কেশরী কর্তৃক রথযাত্রা উদ্যাপনের ইতিহাস পাওয়া যায়। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে, সত্যযুগে মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন কর্তৃক জগন্নাথদেবের শ্রীবিগ্রহ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে রথযাত্রা উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের উল্লেখযোগ্য দিক এর সামাজিক মেলবন্ধন। ‘জগন্নাথ’ শব্দের অর্থ- জগতের নাথ তথা সকলের পরম প্রভু। জগন্নাথ সকলের নাথ, তার কাছে ব্রাহ্মণ-শূদ্র, ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালো প্রভৃতি মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই। সেজন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ এ রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এভাবে সকলের মধ্যে সৌহার্দ্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ববোধ তথা সামাজিক মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। গড়ে ওঠে হিংসা-বিভেদহীন এক সুশৃঙ্খল সমাজ। তাই রথযাত্রা হলো ধর্মীয় ও সমাজিক সম্প্রীতির মিলনমেলা।

বাংলাদেশে রথযাত্রার ইতিহাস থাকলেও ইসকন এটিকে নতুন রূপ দিয়েছে। যা এখন দেশের সবচেয়ে বড় এমনকি বিশ্বের অন্যতম রথযাত্রার উপাধি পেয়েছে। ইসকন সুপ্রাচীন বৈদিকযুগের আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। শ্রীচৈতন্যদেবের অহিংস নীতি প্রতিষ্ঠার দ্বারা বিশ্বভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ গড়ে তোলাই ইসকনের আদর্শ। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে এবারও জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রথযাত্রায় সকলে অংশ নেবেন।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

জগন্নাথ দেব টপ নিউজ রথযাত্রা শুরু


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর