Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পদ্ধতিতে কমিটি, বিএনপিতে অসন্তোষ

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ জুলাই ২০২৪ ১০:৩২

ঢাকা: ক্ষমতা বলয়ের মধ্য থেকে জন্ম নেওয়া বিএনপি টানা সাড়ে ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। এ নিয়ে আপসোস থাকলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক লক্ষ্য ও কর্মকৌশল নির্ধারণে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি দলটি। বরং অনেকটা এলোমেলো ও লক্ষ্যহীন কর্মকৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে তারা।

এরকম কর্মপন্থার অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি কিছুটা পুনর্গঠন করেছে বিএনপি। জাতীয় কাউন্সিল ছাড়াই ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠন করায় বিএনপির মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলটির বেশির ভাগ সিনিয়র নেতা। গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতা তিনবার পদত্যাগ পত্র জমা দেন। পরে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিশেষ ও বারংবার অনুরোধে পদত্যাগপত্র উড্রো করেন তিনি। অবশ্য দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হতে পারে, এ আশঙ্কায় বিষয়টি নিয়ে মিডিয়াতে কেউ মুখ খুলছেন না।

বিজ্ঞাপন

‘ক্ষমতাসীন দল গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সীমিত করে ফেলেছে। দেশে গণতন্ত্রের রেশ মাত্র নেই’-মোটা দাগে এই হচ্ছে বিএনপির নিত্য দিনের অভিযোগ। বর্তমান সরকারকে তারা সরাসরি ‘একনায়ক বা স্বৈরতান্ত্রিক’ সরকার বলে অভিহিত করছে। কিন্তু, দলটি নিজেই গণতন্ত্র থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে বলে প্রশ্ন উঠছে।

বলা হচ্ছে, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেও দলটির অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য সম্প্রতি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সব কিছুই হয় ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ পদ্ধতিতে। চেয়ারপারসন বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে পছন্দ করেন, তাকে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দেন। ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন হলে মহাসচিব পদে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতাম।’

বিজ্ঞাপন

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৭ বছরেও মিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিএনপি বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি। দলটি কখনো জামায়াতসহ ইসলামপন্থি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে, আবার কখনো বা দূরত্ব তৈরি করে। এর ফলে দেশের বামপন্থি ও প্রগতিশীলদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কখনোই চূড়ান্ত রূপ নেয়নি; ঝুলন্ত অবস্থায় থেকেছে। আবার ডানপন্থিরাও বিএনপিকে আগের মতো নির্ভেজাল বন্ধু হিসেবে নিতে পারছে না। তারাও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছে।

বিদেশনীতির ক্ষেত্রেও হ য ব র ল অবস্থা তৈরি করেছে বিএনপি। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিএনপি তার কৌশল বা অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কখনো ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করে চলার চেষ্টা করছে। আবার কখনো বা ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে পণ্য বয়কটের ডাক দিচ্ছে। কখনো ভারতের কূটনীতিকদের সঙ্গে শর্তহীন সংলাপে বসছে, কখনো বা ক্ষমতায় যেতে না পারার একমাত্র কারণ হিসেবে ভারতকে দায়ী করছে। ফলে বিএনপির ব্যাপারে একেবারে ‘নির্দ্বিধা সিদ্ধান্ত’ নিতে বিন্দুমাত্র বেগ পাচ্ছে না ভারত- এমনটিই আলোচনা আছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। এ বিষয়টি নিয়েও কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অসন্তোষ দানা বাঁধছে।

সূত্রমতে, কমিটি পুনর্গঠন বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করা হয়নি। এ সব কর্মকাণ্ডে সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ অসম্মানিত বোধ করছেন। দলটির মধ্যে গুঞ্জন চলছে, এক-এগারোর উদ্ভূত পরিস্থিতি দলের যেসব নেতা খালেদা জিয়া, তারেক রহমান তথা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তারা এখন দলে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করছে। পক্ষান্তরে ঝুঁকি নিয়ে দলের পক্ষে থেকে যারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

জানা গেছে, ১৭ বছর পর দলে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ওইসব বিতর্কিত তরুণ নেতারা এখন সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন নয়াপল্টনকেন্দ্রিক কিছু নেতা। ওই নেতাদের প্রভাব ও পরামর্শেই সম্প্রতি বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু কমিটি ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে দলের পদ-পদবি দখল, প্রভাব বিস্তার এবং দলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাই এসব নেতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে দলের বড় একটি অংশ বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

ফলে আগামী দিনের সরকারবিরোধী আন্দোলনে অতীতের চেয়ে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনীতি বিশ্লেষকরা। বরং অনেক প্রলোভন ও চাপ সত্ত্বেও গত নির্বাচনে বিএনপির অখণ্ডতা রক্ষা করা গেলেও ভবিষ্যতে দলটির পরিণতি কী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেনের উদ্ভুত পরিস্থিতি এবং পরের সাড়ে ১৭ বছর বিএনপির ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ঝড় বয়ে গেছে। এরপরও দলটি এখন পর্যন্ত টিকে আছে এর কর্মী-সমর্থকদের দৃঢ়চেতা মনোবল এবং ভালোবাসার কারণে। এখন অভ্যন্তরীণ যে সমস্যাগুলোর কথা বলা হচ্ছে, এটা সব দলের মধ্যেই থাকে। বিএনপিতেও আছে। এই জায়গায় বিএনপির নীতিনির্ধারকদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সঠিক কর্মকৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে বিএনপিকে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অসন্তোষ, পদ-পদবী নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপি সঠিক পথেই আছে। যেসব সমস্যার কথা বলা হয়, সেটা মেজর কোনো ইস্যু না। বড় দল হিসেবে এতটুকু ঝামেলা থাকবেই। প্রয়োজন মুহূর্তে দেখবেন সবাই দলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

অসন্তোষ তারেক জিয়া বিএনপি বিএনপির কমিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর