চীনে প্রধানমন্ত্রী, সফরে প্রাধান্য বাণিজ্য-বিনিয়োগে
৮ জুলাই ২০২৪ ২১:৫১
বেইজিং (চীন) থেকে: দেশের বড় বড় অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশে চীনের শিল্পকারখানা স্থাপন ও বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে চীন সফরে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে চীনের কাছ থেকে সাত বিলিয়ন তথা সাত শ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ঋণ সহায়তা পেতে পারে বাংলাদেশ। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যেকার ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’র সম্পর্ক এই সফরে ‘কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হবে বলেও প্রত্যাশা রয়েছে।
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (৮ জুলাই) চীনে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি চার্টার্ড ফ্লাইট এ দিন বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চীনের পথে রওয়ানা হয়। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৫ মিনিট) প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি বেইজিংয়ে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে চীনের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রীর চার দিনের চীন সফরের দ্বিতীয় দিন ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে। পরে সেখানেই দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যেও বৈঠক হবে। এ সময় দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কেও ‘ইস্যু’ ভারত, কূটনৈতিক ভারসাম্যের তাগিদ
পরদিন ১০ জুলাই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। একই দিন চীনের পার্লামেন্ট ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস অব চায়নার প্রেসিডেন্ট ঝাও লেজির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন তিনি। এ ছাড়াও চীনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ঋণের সন্ধান বা উন্নয়ন সহযোগী খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ বা বিনিয়োগ ভালো একটি খাত। চীনও বিভিন্ন দেশকেই নানা ধরনের ঋণ দিচ্ছে।
এদিকে আঞ্চলিক বিবেচনায় বাংলাদেশ চীনের জন্য রফতানির বড় উৎস। বাংলাদেশে তারা বছরে ২৩ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রফতানি করে এক বিলিয়ন ডলারেরও কম। চীনের কাছ থেকে ঋণ বা প্রকল্প সহায়তার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাও প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফরে পলিসি ডায়লগের (সিডিপি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাশিত (সাত বিলিয়ন ডলার) ঋণ সহযোগিতা পাওয়া গেলে সেটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমরা যতটা জানতে পেরেছি, পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চীনের ঋণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, ‘চীন যেসব শিল্পে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে পারছে না, সেগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা গেলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে। তাদের এই শিল্পগুলোকে আমাদের দেশে স্থাপনের করা গেলে আমাদের রফতানিও বাড়বে। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চীনের এই সফর আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারা আমাদের বড় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সংযোগী। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত আলোচনার মাধ্যামে আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক সুবিধা আনতে পারব।’
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৫২ সালে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক চীন সফরের মধ্য দিয়ে। সেই সম্পর্ক পাঁচ দশক অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সফরে দুই দেশের সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত হয়। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরে সেই সম্পর্ক উন্নীত হবে ‘কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারিত্বে’। সফরে অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রফতানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আরও দুটি চায়না-বাংলাদেশে ফ্রেন্ডশিপ সেতু নির্মাণসহ ২০টির মতো সমঝোতা স্মারক হতে পারে।
এর আগে সম্প্রতি সংসদের বাজেট অধিবেশনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানান, ২১০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন থাকলেও ৮২টি দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলদেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতি এক হাজার ৫২৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যেখানে চীনের সঙ্গেই ঘাটতি এক হাজার ৭১৪ কোটি ৯২ লাখ বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চীন ১৪০ কোটি জনসংখ্যার একটি বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়ও। চীনের বাজারে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পেলে তৈরি পোশাকসহ বাংলাদেশের রফতানি সক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় সব পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্তভাবে প্রবেশের সুবিধা পাবে। ফলে চীনে রফতানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে, যা বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন-
চীন সফর: সকালে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে ২২ সমঝোতা, এজেন্ডায় নেই তিস্তা
সারাবাংলা/জিএস/টিআর
প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর