কমে গেছে ‘এলএনজি’ সরবরাহ, ঢাকা-চট্টগ্রামে গ্যাস সংকটের শঙ্কা
১০ জুলাই ২০২৪ ১৬:০১
ঢাকা: পন্টুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন মেরামত কাজের কারণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ কমে গেছে। জ্বালানি বিভাগ জানিয়েছে, মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস ও বাখরাবাদ এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। এই পরিস্থিতি ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট আরো বাড়িতে তুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মে সাগরে ভাসতে থাকা ভাঙা একটি পন্টুনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামিটের এলএনজি টার্মিনাল। এতে ওই টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলেও ১৭ জুলাইয়ের আগে এটি ঠিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ আগামী এক সপ্তাহ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরবাসীকে ভয়াবহ গ্যাস সংকটের মধ্যে পড়তে হতে পারে।
এদিকে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানী ঢাকার কিছু কিছু এলাকায় গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে রাজধানীর মান্ডা, মুগদা, মানিকনগর, বাসাবো, বাড্ডা, মগবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, টিকাটুলি, শনির আখড়া, তাঁতিবাজার, জনসন রোড, লক্ষ্মীবাজার, শ্যামবাজার, কেরানিগঞ্জ এদিকে মিরপুর ১৪, ১২, শেওড়াপাড়ার কিছু অংশে দিনের একটা বড় সময় গ্যাস থাকে না। আবার কোনো কোনো এলাকায় রাতে গ্যাস থাকে না, দিনের বেলা স্বল্প চাপ বিরাজ করে।
এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিনের বেশিরভাগ সময় গ্যাস থাকে না, যতটুকু সময় থাকে তাতেও স্বল্প চাপ থাকে। মানিকনগর এলাকার বাসিন্দা নাসরিন জাহান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাত বারোটার পর গ্যাস আসে, ভোর না হতেই চলে যায়। রাতে রান্না করে রাখি তা সারাদিন খেতে হয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এ পরিস্থিতিতে কষ্ট হয়।’
আরেক বাসিন্দা মারজান অনু বলেন, ‘মানিকনগর রেল লাইনের এক পাশে গ্যাস একদম থাকে না, আরেক পাশে থাকে।‘
এদিকে গোপীবাগ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে গ্যাস থাকে, কিন্তু সারাদিনই স্বল্প চাপ বিরাজ করে। পাশের এলাকা টিকাটুলির বাসিন্দা সেলিনা সিরাজ বলেন, ‘গত এক মাস ধরে গ্যাসের সমস্যা হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে ঠিক মত রান্না-খাওয়া হয় না।’
জসিম উদ্দীন রোডের বাসিন্দা বৃষ্টি বণিক বলেন, ‘বিকাল চারটার দিকে গ্যাস আসে, রাত নয়টার মধ্যে চলে যায়।’
মান্ডা এলাকার সঙ্গীতা সিকদার বলেন, ‘এখানে আগে থেকেই গ্যাস সমস্যা যে কারণে বাসা ভাড়া কম। গ্যাস যে কখন আসে সেটাই টের পাই না। ইলেক্ট্রিক্যাল চুলা কিনে নিয়েছি, ওটাতে দুই বেলা কোনোরকমে রেঁধে খাই। কিন্তু এই চুলায় যেভাবে বিদ্যুৎ বিল ওঠে তা বহন করা কঠিন।’
গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও। এবার এলএনজি সরবরাহ কমে গিয়ে এই সংকট কিছুটা বাড়ার আভাস দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। এই এক সপ্তাহ গ্যাসের সরবরাহ যেহেতু কমে যাচ্ছে সেহেতু গ্রাহকরা একটু ঝামেলায় পড়বেন। কোনো কোনো স্থানে গ্যাস একদম নাও থাকতে পারে।’
এদিকে সারাদেশে গ্যাস সংকট নিয়ে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছিলেন, চলমান গ্যাস সংকট ১৫ জুলাই নাগাদ কেটে যাবে। এরপর থেকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ হবে। কিন্তু এর মধ্যে এই দুর্ঘটনা গ্যাস সরবরাহের আরও অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, দু’টি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে এক্সিলারেটের টার্মিনাল দিয়ে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর দেশের ভেতরের গ্যাসক্ষেত্র থেকে পাওয়া যাচ্ছে আরও ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু এর বিপরীতে চাহিদা ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এ হিসাবে প্রতিদিনই ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে।
সূত্র আরও জানায়, ঘাটতির কারণে চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট চরম আকার নিয়েছে। বাসাবাড়িতে গ্যাস নেই। সিএনজি স্টেশনসহ আশপাশের বাসাবাড়িতেও গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/এমও