আলমগীরের ‘কারিশমায়’ গয়রা গ্রামের ঘরে ঘরে সরকারি চাকুরে!
১৪ জুলাই ২০২৪ ১০:৩৫
নওগাঁ: সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন এস এম আলমগীর কবির (৪৮)। তিনি বেড়ে উঠেছেন নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়নে গয়রা সরদারপাড়া গ্রামের সাধারণ এক দিনমজুর পরিবারে। তবে তার ‘কারিশমা’তেই এই গ্রামের প্রায় সব ঘরেই কেউ না কেউ সরকারি চাকরির ‘সোনার হরিণে’র দেখা পেয়েছেন।
আলমগীরের প্রতিবেশী আব্দুল মালেক জানান, গয়রা গ্রামে এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে সরকারি চাকুরিজীবী নেই। প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থেকে অল্পদিনেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠে সে। এলাকায় নিজেকে অনেক বড় চাকরিজীবীর পাশাপাশি চাকরির কোচিং ব্যবসায়ী বলেও পরিচয় দিতো আলমগীর।
প্রশ্নফাঁসকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পিএসসির সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবির হঠাৎ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়ার এ রহস্য হিসেবে তিনি
জানা গেছে, টাকার বিনিময়ে প্রশ্নফাঁস করে নিজ গ্রামের প্রায় ১০০ জনকে সরকারি চাকরি দিয়েছে আলমগীর। এছাড়াও নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী এবং ঢাকাসহ সারাদেশেই তিনি হাজার হাজার মানুষকে মোটা অর্থের বিনিময়ে সরকারি চাকরি দিয়েছেন।
চাকরি দেওয়ার জন্য তিনি ঢাকা এবং বগুড়ায় ‘জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ নামে কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন। সেখানে চাকরি প্রত্যাশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার মোটা অর্থের বিনিময়ে ফাঁসের প্রশ্নপত্র সরবারহ করতেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও আলমগীরের বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। ছাত্রজীবনে ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরসহ আলমগীর কবিরও অন্যের জমিতে কাজ করতেন। কিন্তু পিএসসিতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর চাকরি হওয়ার পর বদলে যেতে থাকে তাদের অবস্থা। এরপর একই দফতরে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সহকারী পরিচালক।
প্রতিবেশী আব্দুল মালেক আরও বলেন, ‘গয়রা গ্রামে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে সরকারি চাকুরিজীবি নেই। আলমগীরের ছোট ভাই হুমায়ুন কবির ছিলেন সৌদিপ্রবাসী গাড়ি চালক। সেখান থেকে তাকে ছেড়ে দেশে ফিরিয়ে আনেন আলমগীর, পাইয়ে দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে চাকরি। ছোট বোন মিনিও একই মন্ত্রণালয়ের স্টেনোগ্রাফার হিসেবে যোগ দেন। তিনি রাজশাহীতে কর্মরত। পিএসসিতে চাকরির পাশাপাশি আলমগীর বগুড়া ও ঢাকায় কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছেন।’
তবে প্রশ্নফাঁসকাণ্ডে আলমগীর কোটি কোটি টাকা বানালেও এলাকায় তেমন কিছুই করেননি। তার বাবা আবুল কাসেম জানান, তার ছেলের ঢাকায় বাড়ি, গাড়ি থাকলেও গ্রামের বাড়িতে তেমন কিছুই করেননি। মাঝে মধ্যে ব্যাক্তিগত গাড়িতে করে বাড়িতে আসে এবং তাদের পরিবারের খরচ দিয়ে যায়। সম্প্রতি আলমগীর গ্রামে বিঘা দশেক জমি কিনেছেন। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি জানেন না।
মিনহাজ নামের আরেক প্রতিবেশি বলেন, “আলমগীর মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে রাতে বাড়িতে এলেও কারো সঙ্গে তেমন মিশতেন না। তবে এলাকার বেকার ছেলেদের সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য কয়েক মাস আগে জেলার বদলগাছি উপজেলার কোলা বাজারে ‘জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের শাখা খোলেন। তবে গত রেলওয়ের পরীক্ষার পর থেকে কোচিং সেন্টারটি বন্ধ করে দিয়েছেন।”
কোলা কলেজের প্রভাষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘এলাকার অনেক বেকার ছেলে আলমগীরের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছে। তাদের কেউ সচিবালয়ে কম্পিউটার অপারেটের, কেউ সাঁটলিপিকার, আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে চাকরি মিলেছে। এখন গ্রেফতারের পর জানা যাচ্ছে, আলমগীরের কোন কারিশমাতে এদের চাকরি হইছে!’
উল্লেখ্য, সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে পিএসসির দু’জন উপ-পরিচালক, দু’জন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। গত রবি ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় তাদের।
সারাবাংলা/এমও
গয়রা গ্রাম নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্নফাঁস সরকারি কর্ম কমিশন সরকারি চাকুরে