কোটা আন্দোলন: ‘শিক্ষার্থী হত্যা’র বিচার চায় গণতান্ত্রিক মঞ্চ
১৬ জুলাই ২০২৪ ১৯:১৩
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে অন্তত ছয়জন নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এর বিচারের দাবি জানিয়েছে রাজনৈতিক জোটটি।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এ দাবি জানান।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমের সভাপতিত্বে সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য নুরুজ্জামান হীরাসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দমাতে সরকার ভয়াবহভাবে মরিয়া। পুলিশ সারা দেশে ন্যাক্কারজনকভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে। রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থী, চট্টগ্রামে তিনজন ও ঢাকায় দুজনসহ মোট পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছে। ভয়াবহ ও নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে আমরাসহ পুরো জাতি স্তব্ধ।
নেতারা বলেন, গত দুদিন ধরে সারা দেশে সরকার তার পুলিশ ও হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগকে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করছিল। এরই নৃশংস ফলাফল হলো এসব হত্যাকাণ্ড।
তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দানবীয় পদ্ধতিতে দেশে আতঙ্ক তৈরি করতে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়েছে। এখন দেশবাসীর করণীয়, এ ফ্যাসিবাদী সরকারকে ঠেকাতে হবে। এরই মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়েছে। গত রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডাবাহিনীকে রুখে দিয়েছিল।
জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, সরকার একদিকে হাইকোর্ট দিয়ে তামাশা অব্যাহত রেখেছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নির্মমভাবে ব্যবহার করছে। কাজেই দেশবাসীকে এই আন্দোলনের পাশে অকুণ্ঠচিত্তে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষার্থীরা যেখানেই নিপীড়িত হচ্ছে সেখানেই জনগণকে দাঁড়াতে হবে। কেননা দেশকে ডামি প্রধানমন্ত্রী মেধার ভিত্তিতে নয়, দেশকে নতজানু দাসদের দিয়ে পরিচালনা করতে চায়।
তারা বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করতে পারেন! একজন সরকারপ্রধান তো আবেগের বশবর্তী হলে সংবিধান অনুযায়ী তার প্রধানমন্ত্রিত্ব থাকে না, পদই থাকে না।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে কোটা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে কমিশন গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। সারা দেশে গুলি, নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলে নেতারা বলেন, বিপুল গণঅভ্যুত্থান ও জাগরণের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন হটানো না গেলে দেশের গণতন্ত্র ও গণমানুষের মুক্তি নেই, দেশেরও কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন পাটোয়ারী, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমম্বয়ক ইমরান ইমন এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর