বেধড়ক পেটাল-কোপাল, রগও কেটে দিলো— পুলিশের সন্দেহ ‘শিবির’
১৭ জুলাই ২০২৪ ২১:৪২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের সময় একটি ভবনে আটকে পড়া অর্ধশতাধিক তরুণ-যুবককে ছাদ থেকে ফেলে নির্মম নির্যাতনের ঘটনা সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনা ছড়িয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে ছাদ থেকে মাটিতে ফেলে ‘সাপের মতো’ বেধড়ক পেটানো হয়েছে, কারও হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত ভিডিওতে নির্যাতনকারীদের এ সময় রীতিমতো উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সহিংসতার শিকার এসব তরুণ-যুবকদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কেউ কেউ সাধারণ পথচারীও আছেন, যারা সংঘর্ষের মধ্যে আত্মরক্ষার জন্য ওই ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। আহতরা অভিযোগ করেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পরিকল্পিতভাবে তাদের ধাওয়া দিয়ে ভবনটিতে অবরুদ্ধ করে এরপর নির্মমতায় মেতে উঠেছিলেন, যারা শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বুধবার (১৭ জুলাই) সকালে নগরীর মুরাদপুরে নির্মমতার সাক্ষী হয়ে থাকা ওই ভবনসহ সংঘর্ষের বিভিন্ন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, হামলা ও সংঘাতের বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দেখে তাদের সন্দেহ হচ্ছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীর ব্যানারে ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রতিদিনের কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে জমায়েতের ডাক দিয়েছিল। বিপরীতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিভিন্ন অংশ তাদের কর্মসূচি প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
দুপুরের আগেই ছাত্রলীগের একাংশ নগরীর ষোলশহর রেলস্টেশনে গিয়ে অবস্থান নেয়, যাদের মধ্যে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের নেতাকর্মীরা ছিলেন। এদের নেতৃত্বে ছিলেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু ও নগর ছাত্রলীগের সাধারণ জাকারিয়া দস্তগীরের নেতৃত্বে আরেকটি অংশ বিকেল ৩টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ষোলশহর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর পর প্রথমে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। কিছুক্ষণ পর কোটাবিরোধীরা আবার সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ষোলশহর স্টেশনের সামনে মূল রাস্তা থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত অংশে অবস্থান নেয়।
মুরাদপুরে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে পৌঁছে তাদের ধাওয়া দিয়ে বহদ্দারহাটের দিকে সরিয়ে দেয়।
উপস্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ধাওয়া দিয়ে মুরাদপুরে ফেরার পর দেখতে পান সড়কের উলটো দিকে অর্ধশতাধিক যুবক হাতে লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ভেবে তারা সড়কের অন্য পাশে অবস্থান নেন।
এর মধ্যেই পাঁচলাইশ থেকে মুরাদপুর মোড় সড়কে হাসিনা বেকারির সামনে থেকে এবং আতুরার ডিপো থেকে মুরাদপুর মোড় সড়কে মক্কা হোটেলের সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর ইট-পাথর নিক্ষেপ শুরু হয়। ততক্ষণে বহদ্দারহাটের দিকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেওয়া অংশটি এবং আগে থেকে লাঠি-হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অংশ মিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বেস্টনী দিয়ে মাঝখানে ফেলে দেয়।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ওপর চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। এরপর শুরু হয় গুলিবর্ষণ। আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। সেই গুলি সড়কে একটি মাইক্রোবাসে লেগেছে। তখন আমাদের সঙ্গে থাকা জুনিয়র কিছু ছেলে, কিছু পথচারী আত্মরক্ষার্থে এলোপাতাড়ি দৌড়ে একটি ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। আনুমানিক ৫০-৬০ জন সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। দৌড়ে যাওয়ার সময় হামলকারীরা যাদের ধরতে পেরেছে, তাদের পিটিয়ে-কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে। এরপর ভবনে গিয়ে যা করেছে, সেটা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।’
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাণভয়ে অনেকেই মুরাদপুরে বেলাল মসজিদের পাশে মিরদাদ ম্যানশন নামে একটি পাঁচ তলা ভবনের ছাদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। নিচে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একাংশ গিয়ে গেট ভেঙে ছাদে উঠে তাদের মারধরের পাশাপাশি বেধড়ক কোপায়। প্রাণভয়ে ছাদ থেকে ওই ভবনের পেছনের অংশের কার্নিশ ও পানির পাইপ বেয়ে কয়েকজন নেমে আসার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে কয়েকজন বিভিন্ন তলায় সান শেড ও জানালার মাঝের অংশে আশ্রয় নেন।
তখন নিচ থেকে আন্দোলকারীরা তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে থাকে। যারা নাগালের মধ্যে ছিল, তাদের লাঠি, হকিস্টিক ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর মধ্যেই ওপরের সান শেড থেকে কয়েকজন নিচে পড়ে যান। আন্দোলনকারীরা তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে।
খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা পুলিশ সদস্যদের একটি টিম নিয়ে সেই ভবনে যান। পুলিশের উপস্থিতি দেখে তখন হামলাকারীরা চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তখন নিচে পড়ে থাকা আহত অনেকে কাতরাচ্ছিলেন। অনেকে ভবনের সানশেডে-পাইপে ঝুলছিলেন। ওসি’র নেতৃত্বে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ ও রেডক্রিসেন্টের গাড়িতে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সারাবাংলার কাছে আসা চারটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ভবনের ছাদে বেধড়ক পিটুনিতে আহত কয়েকজন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। সানশেডে আটকে পড়াদের পাথর ছোড়া হচ্ছিল আঞ্চলিক ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে। নিচে পড়ে যাওয়া কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে ভেবে আন্দোলনকারীদের উল্লাস করতে শোনা যায়।
আন্দোলনকারীদের হামলায় ভবনটির ছাদে আশ্রয় নেওয়া সরকারি হাজি মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের নেতা জালাল উদ্দিন জুবায়ের নিচে পাথরের স্তূপের ওপর পড়ে গুরুতর আহত হন। সে অবস্থায় তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সারাবাংলার কাছে আসা এক ভিডিওতে জালাল উদ্দিন জুবায়ের হামলার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি ছাদে ছিলাম। ওরা (আন্দোলনকারী) এসে দরোজায় লাথি দিচ্ছে। আমি রিকোয়েস্ট করতেছি, ভাই আপনারা চলে যান। ওরা বলতেছে যে কালকে আমাদের বোনকে মারছস না? আজকে তোকে একদম জানে মেরে ফেলব। এরপর আমার হাতে একটা কোপ দেয়। বাম হাতের কবজিতে একটা কোপ দেয়। কোপ দেওয়ার পর আমি ওদের এক সাইড থেকে অন্য সাইডে যখন যাচ্ছি, পেছন থেকে একজন এসে আমাকে লাথি দেয়। লাথি দেওয়ার পরে আমি পড়ে যাই।’
‘পড়ে যাওয়ার পরে নিচে ইট ছিল। ইটের স্তূপ ছিল। ওইখানে পড়ে যাই। হালকা সেন্সলেস হয়ে যাই। এর মধ্যে আমার একটু সেন্স আসছে। ওরা দেয়াল টপকায় ৫০-৬০ জন আসছে। সবার হাতে হকিস্টিক এবং স্টাম্প। একটা ছেলে বলতেছে, একে আমি চিনি। এ ছাত্রলীগ করে। বলে, একে মেরে ফেল। এটা যখন বলছে, সবাই এসে এলোপাথাড়ি আমাকে…। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছি। ভাই, আমিও তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করি। আমাদের কী অপরাধ?,’— বলছিলেন জালাল উদ্দিন জুবায়ের।
মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মায়মুন উদ্দিন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জালাল আমাদের কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও সক্রিয় ছাত্রলীগ কর্মী। তার হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। চোখে গুরুতর জখম হয়েছে। এক চোখ নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। আমাদের কলেজের আরও তিনজন আহত হয়েছেন। তারা মোটামুটি আশঙ্কামুক্ত আছেন।’
নুরুল আজিম রনি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ওই ভবনে আশ্রয় নেওয়াদের প্রায় সবাই হামলায় আহত হয়েছেন। তাদের সংখ্যা অন্তত ৬০। এর মধ্যে ৩৩ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যাদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। পরে ১০ জনকে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন আইসিইউতে আছেন, তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চারজন ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন।
বিক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থী, সংঘাতে শিবির
বুধবার সকালে মুরাদপুরের সেই ভবনসহ সংঘর্ষের স্থল পরিদর্শন করেছেন সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আহতদের অবস্থা পর্যালোচনা করেছি। দেখা গেছে, এটা কোনো সাধারণ হামলার ঘটনা নয়। এখানে হামলা করে রগ কেটে দেওয়া হয়েছে, চোখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। রগ কারা কাটে, সেটা তো আমরা জানি। ভিডিওতে দেখেছি, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছেন। তারা লাঠি, হকিস্টিক, স্টাম্প নিয়ে এসেছেন।’
‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো গতকালের (মঙ্গলবার) আগে লাঠি-ককটেল নিয়ে আসেনি। গতকাল কেন এলো? এগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তবে আমাদের ধারণা, যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিল তারা কেবলই সাধারণ শিক্ষার্থী নন। এখানে এক বা একাধিক সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি কাজ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ,’— বলেন সিএমপি কমিশনার।
ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত একজনের গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে সিএমপি কমিশনার আরও বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর নগরীর কোতোয়ালি থানায় একজন গ্রেফতার হয়েছে, যিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত। তার কাছ থেকে আন্দোলনে শিবিরের সম্পৃক্ততা ও পরিকল্পনার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।
‘হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আমরা অনেক তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যেন নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হয়,’— বলেন সিএমপি কমিশনার।
নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুজন শিবির নেতাকে গ্রেফতার করেছে। এরা হলেন— জাহিদুল আলম জয় (২৩) ও আকিব ইবনে ইউছুপ (২৩)।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, জাহিদুল আলম জয় ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের আন্তর্জাতিক ও ছাত্র আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক। তিনি মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) নগরীর মুরাদপুর মোড়ে আন্দোলনে ছাত্রশিবিরের প্রধান সমন্বয়েকের দায়িত্বে ছিলেন। তার মোবাইলে থাকা ছাত্রশিবিরের দায়িত্বশীল নেতাদের যোগাযোগের একটি অভ্যন্তরীণ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে, সংঘর্ষে নিহত ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১) শিবিরের নগরীর একটি ওয়ার্ড শাখার নেতা। তার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ না করার বিষয়ে শিবির সেই গ্রুপে নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে মুরাদপুরে ভবনে আটকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন ও সংঘর্ষের ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। এতে অজ্ঞাতনামা ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
হামলা ও সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এ পর্যন্ত যে তথ্যপ্রমাণ আছে তাতে দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা কেবল বিক্ষোভে ছিল, আর সংঘাতে জড়িত হয়েছিল ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এটা একদম পূর্বপরিকল্পিত ছিল। তারা সংঘাতের প্রস্তুতি নিয়েই সেখানে গিয়েছিল।’
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে কর্ণফুলী থানা পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে একজন কর্ণফুলী উপজেলা শিবিরের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। বাকি তিনজনও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত জড়িত বলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহির হোসেন জানিয়েছেন।
একই ঘটনায় নগরীর খুলশী থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে, যাতে ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর নগর পুলিশের চার জোনের চার উপকমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ১৬ থানায় মঙ্গলবার রাতভর অভিযানে মোট ৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য কোটাবিরোধী আন্দোলনের চট্টগ্রামের দুই সমন্বয়কারীকে কল দিলে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর
কোটা আন্দোলন কোটা আন্দোলনে সহিংসতা কোটা সংস্কার আন্দোলন চট্টগ্রাম ছাত্রদল ছাত্রশিবির মুরাদপুর শিক্ষার্থীদের আন্দোলন