ছন্দে ফিরছে রাজশাহী
২৫ জুলাই ২০২৪ ১৩:৩৭
রাজশাহী: দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতা ঘটলেও রাজশাহী ছিল এবার শান্ত। রাজশাহীতে কারফিউ চলাকালীনও ছিল কড়াকড়ি। ঘরবন্দি হয়ে যায় সাধারণ মানুষ। কষ্টে পড়েন খেটে খাওয়া মানুষরা। কারফিউ শিথিল হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে নগরবাসী। চিরচেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে রাজশাহী। ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য। সেই সঙ্গে বেড়ে গেছে কর্মব্যস্ততা।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। এর আগের দিন বুধবারও (২৪ জুলাই) সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল ছিল। কারফিউ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে রাজশাহীতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই কয়দিনে রাজশাহীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সবজি চাষিদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই কয়দিনে পাইকার না থাকায় সবজির দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। এর বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রুয়েট, রাজশাহী কলেজ, মহিলা কলেজের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহীর ব্যবসাতে পড়ে ভাটা। রাজশাহীর ব্যবসায় ক্রেতাদের একটি বড় অংশ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং রাজশাহী ছেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় পড়ে ভাটা।
রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী ইমরান আলী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে দোকান বন্ধ থাকায় আমারই অন্তত ৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। রাজশাহীর সব ব্যবসায়ীরই ক্ষতি হয়েছে। তবে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়ায় আমরা ব্যবসায়ীরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছি। আমরা চাই দেশ শান্তিতে থাকুক। আমরা ভালোভাবে ব্যবসা করি। সাধারণ মানুষও শান্তিতে থাকুক।
চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষ। রিকশাচালক খাইরুল ইসলাম বলেন, একদিন রিকশা না চললে তার পরের দিন আর খাবার জোগানোর মতো অবস্থা আমার নাই। ঋণ করে একটা অটোরিকশা কিনেছিলাম। গত এক মাস আগে সে রিকশার ব্যাটারি চুরি হয়ে যায়। আবারও ঋণের টাকায় রিকশা চালু করলাম। এরপর দেশের এই পরিস্থিতি। একদিকে ঋণের বোঝা, অন্যদিকে চলমান পরিস্থিরির খড়গ! দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কোনও কূলকিনারা পাচ্ছি না।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন রাবেয়া বেগম। তিনি বলেন, মোড়ে মোড়ে পুলিশ। আমরা গ্রামের মানুষ। এমনিতেই ভয়ে আছি। শহরে চিকিৎসা জন্য এসে আটকে গেছি। পদে পদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জরুরি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলাম। শহরে এসে আরও ভয় লাগছে। কখন যে কী হয়! এ অবস্থার দ্রুত অবসান হোক।
কষ্টে দিন যাপন ছিল শ্রমিকেদের। আজিজুল ইসলাম পেশায় বাসচালক। গ্রামীণ ট্রাভেলসের কক্সবাজারে গাড়ি চালান। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে কক্সবাজার থেকে এসে নেমেছি। এরপর গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও আমাদের শ্রমের দাম খুব কম। ট্রিপপ্রতি বেতন দেওয়া হয়। তবে যেটুকু দেওয়া হয় তা দিয়ে সংসার খরচ চলে যায়। কিন্তু এখন গাড়ি না চললে আমাদের সংসারও চলে না। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে বসে আছি।
রাজশাহী পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হামিদুল ইসলাম সাজু বলেন, আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা খুব কষ্টে আছেন, তা জানি। তাদের নিয়মিত খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে। আমাদের গাড়ির চাকা ঘুরলেই টাকা পাওয়া যাবে। যদি কারফিউ দীর্ঘ সময় থাকে তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, আমাদের রাজশাহী ছিল শান্ত। ফলে এখানে কারফিউ তেমন কড়াকড়ি না থাকলেও ব্যবসায়ীদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষানগরী রাজশাহীর সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বেশি। এর বাইরে সবজি চাষিদেরও ক্ষতি হয়েছে। পাইকার না থাকায় সবজির নেমে এসেছিল অর্ধেকে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইলিয়াস হোসেন বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অবস্থা অনেকটাই টালমাটাল। আর রাজশাহী হলো শিক্ষা নগরী। এখানকার অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের একটা বড় অংশ শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র করে। সে শিক্ষার্থীরা সবাই চলে গেছেন। এর পাশাপাশি দেশজুড়ে কারফিউ চলছে। কৃষক তার ফসল বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ আমাদের কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বলা চলে শহর প্রায় অচল হয়ে গেছে। এখন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা পুঁজি ভেঙে জীবন ধারণ করছেন।
তিনি বলেন, একটা দেশের অর্থনীতির ভিত হলো ব্যবসা-বাণিজ্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় আন্তর্জাতিক ব্যবসা স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের ফ্রিল্যান্সাররাও বিপাকে পড়েছেন। অনেক গুজবও ছড়াচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণ জরুরিভিত্তিতে করতে হবে। দেশের সরকারপ্রধানও সে তাগিদ দিয়েছেন।
সারাবাংলা/এনইউ