কোটা আন্দোলনের আগুনে পুড়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৩ গাড়ি
২৫ জুলাই ২০২৪ ১৬:১৪
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলার সময় রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৩টি গাড়িতে আগুন লাগায় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া ২৮টি গাড়িতে চালানো হয় ভাঙচুর। এ সব ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি মেরামত ও চলাচলের অযোগ্য বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
আন্দোলন চলাকালে মহাখালী এলাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় হামলার পাশাপাশি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ও শুক্রবার (১৯ জুলাই) মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন ভবনে ধাপে ধাপে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। এ সময় গাড়ি ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুক্রবার (১৯ জুলাই) জুমার নামাজের পর পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার একপর্যায়ে প্রায় ২০০ জন মানুষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরনো ভবনটির গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকে। নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করার পাশাপাশি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টার (এমআইএস) শাখায়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সামনে থাকা গাড়িগুলো ভাঙচুর করার একপর্যায়ে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর একে একে প্রতিষ্ঠানটির সামনেই থাকা গাড়িচালকদের বিশ্রামকক্ষে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ভেঙে ফেলা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস (বিসিপিএস) ভবন, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ভবন, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (আইপিএইচ), জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির কার্যালয়ে ভাঙচুর চলে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুধুমাত্র শুক্রবারের (১৯ জুলাই) তাণ্ডবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৩টি গাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। একইসঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির একটি জেনারেটরও। পাশাপাশি প্রায় ২৮টি গাড়িতে এমনভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে যা মেরামত অযোগ্য হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ২০০ লোকজন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভেতরে প্রবেশ করার পাশাপাশি বাইরেও ছিল প্রায় শতাধিক মানুষ। তবে যারা হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে তাদের মাঝে কে ছাত্র আর কে অছাত্র তা বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। এমন অনেক লোককে ভাঙচুর করতে দেখা গেছে যাদের সন্তানরাও হয়তোবা এখন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পর্যায়ে পড়াশোনা করেন। যারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল তাদেরকেও মারধর করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতর সংলগ্ন এলাকার একজন নিরাপত্তা রক্ষী বলেন, ‘প্রথমে ভাঙচুর শুরু করা হলেও হঠাৎ কয়েকজন গান পাউডার ব্যবহার করে গাড়িগুলো পোড়ানোর জন্য। এরপরে তারা সরে যায়। তবে আরেকটা গ্রুপ সেখান দাঁড়িয়ে ছিল যেন কেউ আগুন নেভাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে। যারা আগুন নেভাতে যায় তাদের ওপরেও হামলা চলে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই প্রতিষ্ঠানটির পরিবহন কর্মকর্তা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বনানী থানায় মামলা করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রশাসন শাখার পরিচালককে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সব ধরনের তথ্য রাখা হয় এমআইএসে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই শাখাটির সামনের দিকে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হলেও সার্ভার রুমের গেট আটকানো থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। সার্ভার রুমে ঢোকার সুযোগ না পাওয়ার কারণে সেখানটা এখনো অক্ষত আছে।’
তিনি বলেন, ‘সর্বমোট ২৩টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এই গাড়িগুলো আর কখনো ব্যবহার করা যাবে না। এর পাশাপাশি ২৮টি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। এর মাঝে আমার নিজের ব্যবহারের গাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়। এই গাড়িগুলো এমনভাবে ভাঙচুর করা হয়েছে যে সেগুলো আর কখনো ব্যবহার করা যাবে কি না তা বলা যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুগদা হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঢাকার বাইরে কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, সে খবর এখনও জানা যায়নি।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুইটি গ্রুপ এসে এই নাশকতা চালায়। তারা গান পাউডার দিয়ে গাড়িগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলে।’
এ সময় তার ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি অনেক লাইন ডিরেক্টরের গাড়িতেও হামলা করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা।
ঘটনার পরে রোববার (২১ জুলাই) ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দেখতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয় না। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। চিকিৎসাসেবা দিতে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সও রক্ষা পায়নি দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে। এরইমধ্যে ক্ষতি নিরূপণের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা খুব দ্রুতই তাদের কাজ শুরু করবে। এ সব ঘটনায় যারা দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দুর্বৃত্তদের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্যখাতে যারা নিয়োজিত ছিল আমাদের কর্মী বাহিনী এবং স্বাস্থ্যসেবার স্থাপনায় হামলা চালানো যাতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যহত হয়। সে উদ্দেশ্যেই হামলা চালিয়ে আমাদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে