৬ সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম নাগরিক সমাজের
৩০ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৯
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কসহ ডিবিতে আটক অন্যান্যদের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। এ সময়ের মধ্যে আটককৃতদের মুক্তি না দিলে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ডিআরইউ সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকারকর্মী শিরীন পারভিন হক, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা।
টিআইবি‘র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ডিবি কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাদের আটক করে আনা হয়েছে, ধরে নেওয়া হয়েছে, সেটি বন্ধ করা ও তাদের যদি নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষ থেকে আরও কঠোর আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ব।’
তিনি বলেন, ‘আজই ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই কর্মসূচি স্থগিত করে সভা থেকে এই আলটিমেটাম দেওয়া হলো।’
অনুষ্ঠানে ডিবি প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারেন, এমন ধারণা থেকে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ডিবি প্রতিনিধি যারা আছেন, আপনারা আপনাদের অফিসকে আমাদের এই বক্তব্য জানাবেন।’
তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। আমি নিজে বিব্রতবোধ করছি। স্বাধীনতার পর ৭১’র মতো সহিংসতা আর অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হবে এটি ভাবনায় ছিল না। যেটি এখন হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। অথচ স্বাধীনতার চেতনাই হচ্ছে বৈষম্যহীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এটি করতে না পারার দায় আমাদের নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাসের ১৯৫২, ১৯৬৯, ৭১ ও স্বাধীনতা পরবর্তীতে তরুণ প্রজন্মরাই এগিয়েছিল। আজকে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরাই এগিয়ে এসেছে। ইতিহাসই বলে দেয়, তরুণ-শিক্ষার্থীরা হচ্ছে অজেয় শক্তি। আমরা আশা করেছিলাম, সেটি সরকার বিবেচনায় নেবে। কিন্তু তরুণদের ন্যায্য আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখা হয়েছে। আন্দোলন ঘিরে সবকিছুর দায় সরকারকে নিতে হবে।’
উপস্থাপিত দাবি-দাওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নিষেধাজ্ঞা বা নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।’
নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা ও মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক বলেন, ‘আমরা আজ অনুষ্ঠান শেষে ডিবি কার্যালয়ে যাব। আমরা তাদের সঙ্গে দেখা করার জন্য চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তিন সমন্বয়ক ভর্তি ছিল। নাহিদ ইসলাম, আসিফ এবং আবু বক্কর। যেদিন ওদেরকে নিয়ে যায় ওরা তখনও কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল। আগে থেকেই ডিবি, এসবি, এনএসআই এবং ডিজিএফআইয়ের লোকজন হাসপাতালে গিজগিজ করছিল। বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা ঘটবে। এর মধ্যেই বিকালে ডিবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আসলেন। তারা বললেন, আমরা নিয়ে যাব। আমাদের নার্সরা তখন বললেন, এখনও তো উনাদের চিকিৎসা শেষ হয়নি। তখন উনারা বললেন, আপনারা ডিসচার্জ করে দেন। তখন নার্সরা বললেন, আমরা তো চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিসচার্জ করতে পারি না। তারা বললেন, কেমনে পারবেন না আমরা দেখে নেব। অনেকটা জোরপূর্বকভাবেই ডিসচার্জ করানো হয়েছে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে
ইফতেখারুজ্জামান কোটা কোটা আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন টিআইবি বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ