‘যৌতুক না পেয়ে’ স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করলেন স্বামী
৩০ জুলাই ২০২৪ ২১:৪৬
যশোর: যৌতুক না পেয়ে যশোরের বাঘারপাড়ায় এক নারীকে মারপিটের পর মাথার চুল কেটে দিয়েছেন তার স্বামী। এ ঘটনায় থানা পুলিশ মামলা না নেওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ভিকটিম নারী।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে স্বামী, দেবর ও শাশুড়ির নামে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম, তৌহিদুল ইসলাম ও নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী হাফিজা খাতুন।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১৫ মে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সিলুমপুর গ্রামের জামসের আলীর মেয়ে আনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় সোনার গয়নাসহ ২ লাখ টাকার মালামাল উপহার হিসেবে দেওয়া হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ব্যবসার জন্য ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তরিকুল ইসলাম। আনোয়ারা খাতুন টাকা এনে দিতে রাজি না হওয়ায় তরিকুল ইসলাম, তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম ও মা হাফিজা খাতুন তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করে সংসারে টিকে থাকার চেষ্টা করলেও সর্বশেষ গত ২৭ জুন একমাত্র ছেলে সন্তানকেসহ আনোয়ারা খাতুনকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর তিনি তার পিতার বাড়িতে আশ্রয় নেন।
এরপর তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্বামীর সঙ্গে মীমাংসার চেষ্টা চালান। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই আনোয়ারা খাতুনের পিতার বাড়িতে মীমাংসায় বসে দুই পরিবারের লোকজন। এরপর আনোয়ারা খাতুন ও তার সন্তানকে নিয়ে মাইক্রোবাসাযোগে মেহেরপুরের উদ্দেশে রওনা হন তরিকুল ইসলাম, তার ভাই ও মা। পথের মধ্যে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুরের বিপুল ফারাজির ইটভাটার সামনে পৌঁছুলে আনোয়ারা খাতুনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারপিট করা হয় এবং তার মাথার চুল কেটে দেয়। এ সময় তার চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে তার ছেলেকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তরিকুল ইসলাম ও তার স্বজনরা চলে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
সুস্থ হয়ে থানায় গেলে পুলিশ আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। যে কারণে তিনি মঙ্গলবার আদালতে এ মামলা দায়ের করে ন্যায় বিচার চেয়েছেন।
নির্যাতিত আনোয়ারা খাতুন আদালত চত্বরে কাঁদতে কাঁদতে জানান, তার স্বামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার অনেক প্রভাব। তারপরও তাকে এভাবে নির্যাতন চালাবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।
আনোয়ারা খাতুনের আইনজীবী মোস্তাফা হুমায়ুন কবির জানান, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী, দেবর ও শাশুড়ির কাছে নির্যাতিত হয়ে বাঘারপাড়া থানাতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। এখন তিনি নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছেন। ভুক্তভোগী নারী এখন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বাঘারপাড়া থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নারীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি থানাতে নতুন এসেছি। আমি আসার আগে হয়তো ওই ভুক্তভোগী নারী থানায় আসতে পারেন। আমি যোগদানের পরে আমার জানামতে তিনি মামলা করার জন্য আসেননি।’
তিনি বলেন, ‘আদালত যেহেতু নির্দেশ দিয়েছে মামলা গ্রহণের, নির্দেশের কাগজ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, আদালতে উপস্থিত বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘এ ধরনের নির্যাতন নারীর জন্য অবমাননাকর। এ নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।’
সারাবাংলা/একে