তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার গণমিছিল
২ আগস্ট ২০২৪ ১৮:১০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীতে ‘ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ হয়েছে। এতে তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন বয়সী হাজারো মানুষ অংশ নেয়, যার বেশিরভাগই কিশোর-তরুণ। মিছিল থেকে নগরীতে একটি পুলিশ বক্স ও পুলিশ-মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নামফলক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
‘শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলে দেওয়া’সহ ৯ দফা দাবিতে শুক্রবার (২ আগস্ট) জুমার নামাজের পর নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ থেকে গণমিছিল শুরু হয়। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া অনেক মুসল্লি তাদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন। মসজিদের বিপরীতে পুলিশ অবস্থান নিয়েছিল।
নামাজ শেষে দুপুর পৌনে ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা মসজিদের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। এসময় নগর পুলিশের কোতোয়ালী জোনের সহকারি কমিশনার অতনু চক্রবর্তী ও কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক গিয়ে তাদের মিছিল না করার অনুরোধ করেন। আন্দোলনকারীরা তাদের উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
পুলিশ সেখান থেকে সরে গেলে প্রায় হাজারখানেক আন্দোলনকারী আন্দরকিল্লা মোড়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এসময় ওই এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীরা ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জবাই কর, উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার ভাই মরল কেন, সরকার জবাব চাই, আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে, আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না।’- এ ধরনের বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সোয়া দুটার দিকে বৃষ্টির মধ্যে মিছিল নিয়ে লালদিঘী হয়ে নিউমার্কেটের দিকে এগিয়ে যান আন্দোলনকারীরা।
এদিকে আন্দোলনকারীরা চলে যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি মিছিল নগরীর চেরাগি পাহাড় থেকে আন্দরকিল্লা আসে। এরপর মিছিলটি ঘুরে চেরাগির পাহাড়ের দিকে চলে যায়। মিছিলে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন।
দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এসময় সেখানেও যানজটের সৃষ্টি হয়। বিকেল তিনটার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে টাইগার পাস এলাকায় অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণের টাইগারপাসের চারপাশে অর্থাৎ নগরীর মূল সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সেখানে কিছু সংখ্যক পুলিশ থাকলেও তারা আন্দোলনকারীদের বাধা দেননি। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা শুধু স্লোগান দেন, কেউ বক্তব্য রাখেননি।
আন্দোলনকারীদের একজন বিকেল পৌনে চারটার দিকে টাইগারপাস থেকে কর্মসূচি শেষ করার ঘোষণা দেন। এরপর তাদের একাংশ মিছিল নিয়ে মুরাদপুরের দিকে চলে যান। মিছিল নিয়ে যাবার পথে নগরীর ওয়াসার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করেন তারা। এরপর মিছিল থেকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে পুলিশ-মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সড়ক সংলগ্ন নামফলক ভাঙচুর করেন। সেখানে পুলিশ থাকলেও তাদের বাধা দেওয়া হয়নি। সেই মিছিল মুরাদপুরে গিয়ে যে যার মতো করে চলে যান।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন,‘আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে যাবার সময় পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ভেতরে তখন কোনো পুলিশ ছিল না। এ বিষয়ে মামলা হবে কী না সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবো।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দোলকারীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে আন্দরকিল্লায় অবস্থান নিয়েছিল। আমরা তাদের মিছিল না করতে অনুরোধ করলেও তারা সেটা মানেনি। বিশ মিনিটের মতো তারা সেখানে অবস্থান নেয়। এরপর মিছিল নিয়ে সেখান থেকে নিউমার্কেট গিয়ে অবস্থান নেয়। তারপর তারা টাইগারপাসে গিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করে। তবে আন্দোলনকারীদের একাংশ মিছিল নিয়ে ওয়াসার দিকে গেছে।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীদের একাংশ মিছিল নিয়ে মুরাদপুর গিয়ে সেখান থেকে চলে গেছেন।
সারাবাংলা/আইসি/এমও