রংপুরে আ.লীগ নেতাসহ নিহত ৫, এমপি-মেয়রের বাড়িতে আগুন
৪ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৫৫
রংপুর: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে রংপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা, যুবলীগ কর্মীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে সিটি বাজারসংলগ্ন জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারের পাশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় তারা নিহত হন।
নিহতরা হলেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খায়রুল আলম সবুজ, যুবলীগ নেতা মাসুম। তবে নিহত অপর দু’জনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রসিক কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান শাহাজাদা।
এর আগে, এক দফা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সকাল ১০টা থেকে রংপুর টাউন হলের সামনে সড়কে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। এক ঘণ্টার মধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে জমায়েত হয়ে সরকারের পতনে এক দফা দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। ‘আগস্ট মাসে কিসের শোক, সবার আগে বিচার হোক’, ‘আমরা আছি থাকব, যুগে যুগে লড়ব’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছ’ বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে পুরো এলাকা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে অনেক অভিভাবকও আন্দোলনে যোগ দেন।
বেলা ১২টার দিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে ভাঙ্গা মসজিদের সামনে এগিয়ে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু যায়। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ চলে। পরে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পিছু হটতে হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। এসময় কাউন্সিলর হারাধন হারাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
সংঘর্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পিস্তলসহ দেশি অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা গেছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে আজ কোথাও প্রতিরোধ কিংবা অবস্থান করতে দেখা যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের এখন আলোচনায় বসতে বলতেছেন। বঙ্গবন্ধু তো আলোচনায় বসেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার ভাইয়ের লাশের ওপর দিয়ে আলোচনায় বসতে পারব না। তাই আর কোন আলোচনা নয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ করা ছাড়া এর কোনো সমাধান নাই।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সরকারের পেটোয়া বাহিনী প্রকাশ্যে গুলি চালাচ্ছে। আজকের কর্মসূচিতে আমাদের অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে।’
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আমরাই অনেকটা অবরুদ্ধ রয়েছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’
এমপি-মেয়র চেয়ারম্যানের বাড়ি, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন
বদরগঞ্জ উপজেলা সদরে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী, বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র টুটুল চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সুইট, যুবলীগ নেতা পুলিন চৌধুরীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুট হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া মিঠাপুকুর উপজেলার ইউএনও কার্যালয়, সাবেক এমপি আশিকুর রহমানের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে।
এদিকে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে রাখা ১১টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সকাল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রংপুর নগরীর টাউন হল চত্বরে সমবেত হতে থাকে। অপরদিকে, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা নগরীর জাহাজ কোম্পানি এলাকায় অবস্থান নেয়। সকাল ১১টার দিকে উভয়পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ সিটিবাজার থেকে শুরু করে জাহাজ কোম্পানি এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা
সংঘর্ষ চলাকালে একুশে টিভির ক্যামেরাপারসন আলী হায়দার রনি, এনটিভির ক্যামেরাপারসন আরমানসহ ৮ সাংবাদিককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই এবং ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে ছবি নিতে দেখলেই মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে আহত সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/এমও