থমথমে-জনশূন্য ঢাকার রাজপথ, প্রবেশপথে কঠোর অবস্থানে পুলিশ
৫ আগস্ট ২০২৪ ১১:৫৯
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজধানী ঢাকায়। চলমান কারফিউ বাস্তবায়নসহ এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে শিক্ষার্থীরা যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সে জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। ঢাকার প্রবেশপথে বসানো হয়েছে একাধিক ব্যারিকেড।
পুলিশ জানিয়েছে, কোনো ধরনের যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে হচ্ছে না। এমনকি সাধারণ মানুষের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। দুয়েকজনকে প্রবেশ করতে দিলেও কঠোর তল্লাশির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সোমবার (৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। সকাল ১১টা পর্যন্তও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে। কোথাও আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। মোড়ে মোড়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি খুব একটা দেখা যায়নি।
রাজধানীর অন্যতম প্রবেশপথ গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমিনবাজার ব্রিজের গোড়ায় সড়কের দুপাশ ধরে তিন স্তরের ব্যারিকেড বসিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। একটু দূরেই র্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্যদেরও দেখা গেছে। তবে আশপাশে কোনো সেনা সদস্য দেখা যায়নি।
গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সারাবাংলাকে বলেন, এখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের যানবাহন, এমনকি কোনো মানুষকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আন্দোলনকারীরা এলেই তাদের ধরতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করতে বলেছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো তেমন কেউ আসেনি এই এলাকায়।
রাজধানীর আব্দুল্লাহপুরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী বসিয়েছে পুলিশ। আলাদা করে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসিয়েছে র্যাবও। যানবাহন চলাচল এ সড়কে একেবারেই করতে দিচ্ছে না। শুধু আব্দুল্লাহপুর নয়, হাউজ বিল্ডিং, জসিম উদ্দীন ও বিমানবন্দর এলাকাতেও একাধিক ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। সকাল ১১টা পর্যন্ত এসব এলাকায় সড়কে সুনসান নিরবতা বিরাজ করছে।
ঢাকার ৩০০ ফুট সড়কেও পুলিশ কয়েক স্তরের ব্যারিকেড দিয়েছে। এসব ব্যারিকেড পার করে কাউকে চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। ৩০০ ফুট সড়ক ও আশপাশে কোনো সেনা সদস্যকে দেখা যায়নি।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় অন্তত ১০ স্তরের ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। একই সঙ্গে অবস্থান নিয়েছে বিজিবি ও র্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য। এই এলাকাতেও স্থানীয়রা সেনা সদস্যদের দেখেননি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে পোস্তগোলা ব্রিজের দুপাশেই অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব এলাকাতেও পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে যান ও জন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স কেবল যাচাই করে ছেড়ে দিয়েছেন তারা। আর কোনো যানবাহন বা কোনো ব্যক্তিকে পার হতে দেওয়া হয়নি।
বাবুবাজার ব্রিজের গোড়াতেও বিপুলসংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। ব্যারিকেড বসিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে চলাচল। এপিসি ও জলকামান নিয়ে প্রস্তুত নিয়েছে পুলিশের আলাদা আলাদা ইউনিট। এই পথে কোনো যানবাহন, এমনি সাধারণ মানুষকেও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সোমবারের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে সবার জমায়েত হওয়ার কথা রয়েছে শাহবাগে। সকাল থেকেই এ এলাকা পুলিশ ঘিরে রেখেছে। শাহবাগ মোড়ের আশপাশের প্রতিটি সড়কের মাথায় বসানো হয়েছে বেশ কয়েক স্তরের ব্যারিকেড। একাধিক স্তরে সারিবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। জলকামান ও এপিসি কার প্রস্তুত রাখা হয়েছে শাহবাগের আশপাশের এলাকায়।
শাহবাগের অদূরে বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজারেও পুলিশ একাধিক স্তরের ব্যারিকেড বসিয়েছে। ব্যারিকেড রয়েছে কাকরাইল মসজিদ মোড়, মৎস্য ভবন মোড়েও। এক কথায়, শাহবাগের সঙ্গে সংযুক্ত প্রতিটি সড়কের বেশকিছু এলাকায় প্রতিটি মোড়ই ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
পোশাক পরিহিত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও অনেক পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত রয়েছেন শাহবাগ ও আশপাশের এলাকাসহ গোটা ঢাকায়। ডিএমপি জানিয়েছে, শাহবাগে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জমায়েত ঠেকাতে যত ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হয়, তার সবই তারা ব্যবহার করবে। যেকোনো মূল্য শাহবাগে জমায়েত ঠেকানো হবে।
পুলিশ বলছে, সব ধরনের অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে তিন দিনের জন্য। কারফিউ চলমান রয়েছে। কঠোরভাবে কারফিউ পালনে রাজধানীবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বিনা কারণে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেছেন সবাইকে। কেউ কারফিউ ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফলে মানুষের বের হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কই একদম ফাঁকা রয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদেরও রাজধানীর কোথাও চোখে পড়েনি। রাজধানীবাসী বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক মাহামারির সময়ও এত সুনসান ছিল না রাস্তাঘাট।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীদের আগেই সতর্ক করা হয়েছে, যেন তারা শাহ্বাগে না আসেন। শাহবাগে জমায়েত প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে কারফিউ প্রতিপালন করবেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর