কেমন ছিল আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো
৭ আগস্ট ২০২৪ ২২:৫৯
ঢাকা: ১৯৯০ সালে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের পর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের জন্য গঠন করা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর ১৯৯৬ সালে গঠিত হয় দ্বিতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাতিল করা আগে ২০০১ সাল ও ২০০৬ সালে ফের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়।
১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যখন পতন হয়, তখন অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান সংবিধানে ছিল না। তবে রাজনৈতিক দলগুলোসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ঐকমত্য ছিল। ফলে সময় স্বল্পতার কারণে তখন সংসদ অধিবেশন আহ্বান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে যুক্ত করা সম্ভব না হলেও এর কার্যক্রম পরিচালনার নৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর নতুন নির্বাচিত সরকার প্রথম সংসদ অধিবেশনেই এই সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়।
এখন পর্যন্ত চারটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে সবশেষ ২০০৬ সালের পর থেকে পরবর্তী দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামো বদল হয় দুইবার। তাতে দেশের ইতিহাসে ছয়টি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়েছে বলা যায়। এখানে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো কেমন ছিল।
আরও পড়ুন- ফের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারে’র পথে বাংলাদেশ
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯০
গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই দিনই ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ওই সময় জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগ পর্যন্ত কোন ধরনের সরকার দায়িত্ব পালন করবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দল ও জোটসহ বিভিন্ন মহলের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, প্রধান বিচারপতি তথা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বেই একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, যার নাম দেওয়া হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ৯ ডিসেম্বর সেই সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
ওই সময় রাজপথে আন্দোলনরত প্রধান তিনটি রাজনৈতিক জোট শাহাবুদ্দিন আহমেদের অধীন উপদেষ্টা পরিষদের জন্য নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করে। তিন জোটের প্রস্তাবনায় উঠে আসা ৩১টি নাম থেকে ১৭ জনকে বেছে নেওয়া হয় উপদেষ্টা হিসেবে। গঠন করা হয় ১৮ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
প্রথম সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিচারপতি এম এ খালেককে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন কফিলউদ্দিন মাহমুদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফখরুদ্দীন আহমদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে রেহমান সোবহান। জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও পূর্ত মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে; শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী; সমাজকল্যাণ, মহিলা বিষয়ক এবং যুব উন্নয়ন ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আলমগীর এম এ কবীর; শিল্প, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে একেএম মুসা; স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ডা. এম এ মাজেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে জাহাজ, নৌ চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামকে। সংস্কৃতি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে, যিনি পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া যোগাযোগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এবিএমজি কিবরিয়া; সেচ, বন, পরিবেশ, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কাজী ফজলুর রহমান; বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইমাম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী; ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে বি কে দাস; কৃষি ও ভূমি ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়ে এ এম আনিসুজ্জামান; এবং শ্রম, জনশক্তি এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চৌধুরী এম এ আমিনুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই সরকার পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। সেই সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদের অবসান ঘটে। নবনির্বাচিত সরকার প্রথম সংসদ অধিবেশনেই এই সরকারের কার্যক্রমের বৈধতা দেয়।
আরও পড়ুন- আজ ফিরতে পারেন ড. ইউনূস, ঘোষণা হতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬
১৯৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করলেও বিএনপি ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন করে। তবে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই সে নির্বাচন বর্জন করলে ওই নির্বাচনের পর গঠিত সরকার ১১ দিনের মাথায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। গঠন করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী এবারেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে গঠন করা হয় ১১ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ১৯৯৬ সালের ৩ এপ্রিল সেই সরকার শপথ নেয়।
এই সরকারের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের অধীনে ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, তথ্য, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগ। সরকারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস; যিনি ঠিক এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মো. শামসুল হক। শিল্প, বাণিজ্য, পাট এবং বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সেগুফতা বখত চৌধুরী।
এই সরকারে কৃষি ও খাদ্য, মৎস্য ও পশুসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এ জেড এম নাছিরুদ্দীন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রহমান খান। অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ; যোগাযোগ, নৌ পরিবহণ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। শ্রম ও জনশক্তি, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ড. নাজমা চৌধুরী। আর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ড.জামিলুর রেজা চৌধুরী।
দায়িত্ব গ্রহণের আড়াই মাসের মধ্যেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সেই সরকারের মেয়াদের অবসান ঘটে।
আরও পড়ুন- ‘ছাত্র-জনতার প্রস্তাবিত সরকার চূড়ান্তের নিশ্চয়তা পেয়েছি’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১
পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণ করার পর ২০০১ সালের জুলাইয়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময়কার প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান সেই সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন ২০০১ সালের ১৫ জুলাই। দুই দিন পর শপথ নেন আরও ১০ জন উপদেষ্টা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে থাকা বিচারপতি লতিফুরের অধীনে ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, নির্বাচন কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন বিচারপতি বিমলেন্দু বিকাশ রায় চৌধুরী। শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ছিলেন এ এস এম শাহজাহান।
এই সরকারের কৃষি ও নৌ পরিবহণ এবং মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীকে। তথ্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত, খাদ্য, পরিবেশ ও বন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন এ কে এম আমানুল ইসলাম চৌধুরী। অর্থ, পরিকল্পনা এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ে ছিলেন এম হাফিজ উদ্দিন খান। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার (অব.) অধ্যাপক আবদুল মালেক। শিল্প, বাণিজ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) মইনুল হোসেন চৌধুরী। আর মহিলা ও শিশু বিষয়ক, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন রোকেয়া আফজাল রহমান।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর এই সরকারের অধীনে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরে ১০ অক্টোবর বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত এই সরকার দায়িত্ব পালন করে।
আরও পড়ুন- বঙ্গভবনে বৈঠকে সিদ্ধান্ত— অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৬
২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হলে ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। এ অবস্থায় সবশেষ সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যয়ে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন।
ড. ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চরম মতানৈক্য দেখা দিলে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি জরুরি নির্বাচন স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করেন রাষ্ট্রপতি। পরে তিনি প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে যান। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ড. ইয়াজউদ্দিনের অধীনে ছিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়, ভূমি, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল বিচারপতি ফজলুল হকের ওপর। অর্থ ও পরিকল্পনা, বাণিজ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন ড. আকবর আলি খান। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী। কৃষি, সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে ছিলেন সিএম শফি সামী।
এ ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং নৌ পরিবহণ, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনের দায়িত্বে ছিলেন আজিজুল হক। মৎস্য ও পশুসম্পদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ধীরাজ কুমার নাথ। পানিসম্পদ, তথ্য ও ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাহবুবুল আলমকে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দায়িত্বে ছিলেন সুফিয়া রহমান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং সমাজকল্যাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইয়াসমিন মুরশেদকে। আর শিল্প, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন সুলতানা কামাল।
মাসখানেক কাজ করার পর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে মতানৈক্যের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন উপদেষ্টা পরিষদের চার সদস্য— ড. আকবর আলি খান, লেফটেন্যান্স জেনারেল (অব.) হাসান মশহুদ চৌধুরী, সি এম শফি সামী ও সুলতানা কামাল। পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত হন সফিকুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক এম মইনউদ্দিন খান, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী ও ড. শোয়েব আহমেদ।
আরও পড়ুন- শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব ফেরাতে পারি না: ড. ইউনূস
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭
ড. ইয়াজউদ্দিনের পর জরুরি অবস্থার মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ। তার অধীনে ছিল কেবিনেট ডিভিশন, সংস্থাপন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। অর্থ, পরিকল্পনা, বাণিজ্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। যোগাযোগ, নৌ পরিবহণ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিনকে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তপন চৌধুরী।
শিল্প, বস্ত্র ও পাট, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, পানিসম্পদ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর জেনারেল (অব.) মতিউর রহমানকে। শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ছিলেন আইয়ুব কাদরী । এলজিআরডি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন আনোয়ারুল ইকবাল। পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। কৃষি,মৎস্য ও পশুসম্পদ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ছিলেন ড. চৌধুরী সাজ্জাদুল করিম।
আরও পড়ুন- ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা সমন্বয়কদের
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮
প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আসে। এবারও এই সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন ড. ফখরুদ্দীন। এবারে তার অধীনে রাখা হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, সংস্থাপন বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ২০০৭ সালের মতো এ বছরেও এই সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) এম এ মতিন, ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, আনোয়ারুল ইকবাল ও ড. চৌধুরী সাজ্জাদুল করিম। তবে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব কিছুটা পরিবর্তন হয়।
নতুন যুক্ত হওয়া ড. এ এম এম শওকত আলীর অধীনে ছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এ এফ হাসান আরিফের অধীনে ছিল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়। মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদেরের অধীনে ছিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় রাশেদা কে চৌধুরীকে। আর শিক্ষা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সবশেষ এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের ম্যান্ডেট পায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। ২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি নির্বাচিত সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করলে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবসান ঘটে।
সারাবাংলা/টিআর
অন্তর্বর্তী সরকার ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচারপতি লতিফুর রহমান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিচারপতি হাবিবুর রহমান