আবু সাঈদের মতো আমাদেরও দাঁড়াতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
১০ আগস্ট ২০২৪ ১২:২৯
রংপুর: বন্দুকের নলের সামনে আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরকেও সেভাবে দেশ গড়ার কাজে দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। তার (আবু সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজটা করার মধ্য দিয়ে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আবু সাঈদ এখন এক পরিবারের সন্তান না। বাংলাদেশের যত পরিবার আছে, তাদের সন্তান। যারা বড় হবে, স্কুল-কলেজে পড়বে, তারা আবু সাঈদের কথা জানবে এবং নিজে নিজেই বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে।’
শান্তিতে নোবেলজয়ী এই বাংলাদেশি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান আবু সাঈদ। হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক—সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা সবাই এই মাটিরই সন্তান। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটি নিশ্চিত করতে পারি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জে জাফরপাড়ার বামনপুরে শায়িত আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন তিনি। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন।
এরপরই ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবু সাঈদের মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানান।
এর আগে, আজ সকাল ১১টার কিছুক্ষণ আগে পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবনপুর গ্রামে পৌঁছান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বিমানবন্দরে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, এই সময়ে আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটি কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার পর থেকে আর কোনো যুবক, কোনো যুবতি হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মারতে পারো। আমরা আছি।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে পুলিশ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবারের আশা ছিল, বিসিএস ক্যাডার হয়ে আবু সাঈদ পরিবারের হাল ধরবে।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুরে গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ। নয় ভাই বোনের মধ্যে আবু সাঈদ ছিল সবচেয়ে ছোট।
সারাবাংলা/একে