পুকুর দখলের অভিযোগে বিএনপি নেত্রীর দলীয় পদ স্থগিত
১১ আগস্ট ২০২৪ ১৮:০৩ | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪ ১৯:৫৫
ঢাকা: জনগণের নামে লিখে দেওয়া পুকুর দখলের অভিযোগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিনের দলীয় পদ স্থগিত করা হয়েছে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) হিসেবে বিলকিস জাহান শিরিনের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বরিশাল মহানগরের ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় জনগণের নামে লিখে দেওয়া ১০ কোটি টাকা মূল্যের পুকুর দখলের অভিযোগ উঠেছে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেত্রী বিলকিস জাহান শিরিন ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে টানা চার রাত ট্রাক ভরে বালু এনে ভরাট করা হয় নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকায় পুকুরটি— এ অভিযোগ এলাকাবাসীর। একই অভিযোগ বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনসহ (বাপা) বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের।
তবে দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরিশালের দায়িত্বে থাকা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন। তার দাবি দখল সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। তবে, ওই সম্পত্তি তাদের পৈতৃক বলে দাবি করেন শিরিন। অবশ্য, নিজস্ব সম্পত্তি হলেও পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে সরকারি যেসব আইন মানতে হয় তা মানা হয়েছে কি না? জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অষ্টাদশ শতাব্দীতে বরিশালে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছিলেন পর্তুগিজ নাগরিক এমটি ব্রাউন। তৎকালীন বরিশালের বিশাল একটি এলাকা কেনেন তিনি। কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ব্রাউন কম্পাউন্ড। ১৯২২ সালে সেখানে থাকা তিনটি পুকুর জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা ও দলিল করে দেন তার স্ত্রী মিসেস ব্রাউন।
এরপর থেকেই পুকুরগুলো ব্যবহার করে আসছেন ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দারা। এরই একটি পুকুর গত বছরের মে মাসে হঠাৎ ভরাট শুরু করেন বিএনপি নেত্রী শিরিন ও তার পরিবার। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেয় বাপা ও বেলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা। পরিবেশ অধিদফতর ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও যান সেখানে।
অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের প্রমাণ পেয়ে সেখানে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে একটি সাইনবোর্ড টাঙায় সিটি করপোরেশন। একই সঙ্গে বিলকিস জাহান শিরিন ও তার পরিবারের সদস্যসহ মোট সাতজনকে একটি সতর্কীকরণ নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদফতর।
নোটিশে অবৈধভাবে পুকুর ভরাটের প্রমাণ পাওয়ার উল্লেখের পাশাপাশি যে বালু ফেলা হয়েছে তা অপসারণ ও দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। ওই নোটিশের পর বালু ভরাট ও দখল প্রক্রিয়া বন্ধ হলেও অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী পুকুরে ফেলা বালু অপসারণ করেননি অভিযুক্ত সাত জন।
নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বরিশাল নগর ভবনের সম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরের মে মাসে পুকুর ভরাট শুরু হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেই। একই সঙ্গে নগর ভবনে থাকা দলিল দস্তাবেজ ঘেঁটে দেখা যায়, জায়গাটি পুকুর হিসাবেই রয়েছে ম্যাপে।’
তিনি বলেন, ‘সিএস, আরএস ও এসএ-তেও একই তথ্য। যতদূর দলিল দস্তাবেজ দেখেছি তাতে পুকুরটি মিসেস ব্রাউন জনস্বার্থে দলিল করে দান করে গেছেন। পুকুর ভরাট করা যাবে না মর্মে একটি নোটিশও সেখানে লাগিয়ে দিয়ে আসি। গত দু’দিন ধরে শুনছি সেটি নাকি আবার ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি, আমাদের মেয়রও আত্মগোপনে। ফলে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে মুখ্য কর্মকর্তা যদি নির্দেশ দেন অবশ্যই সেখানে গিয়ে বাধা দিতে পারব।’
বিএনপি নেত্রী শিরিনের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে ৫ আগস্ট যখন দেশব্যাপী আনন্দ-উচ্ছ্বাস, ঠিক সেই মুহূর্তে রাতের অন্ধকারে শুরু হয় প্রায় ২৫ শতাংশ জায়গা জুড়ে থাকা পুকুর ভরাট। শিরিনের ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম শামিম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তত্ত্বাবধান করেন ভরাট কার্যক্রম। ভেঙে ফেলা হয় ভরাট বন্ধে নগর ভবনের লাগানো সাইনবোর্ড।
এর আগে যখন ভরাটের চেষ্টা হয় তখন সবাই মিলে বাধা দিয়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু এখন তো ভিন্ন পরিস্থিতি। অভিযোগ যে করব সে জায়গাটিও নেই। কারণ, পুলিশ নেই থানায়।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম