চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
১১ আগস্ট ২০২৪ ২১:৩২
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে সংস্কারের দাবি জানিয়েছে জেলা সাধারণ সাংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পাশাপাশি তারা প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাব সম্পৃক্তকরণ ও সাধারণ সংবাদ কর্মীদের অধিকার হরণের প্রতিবাদ জানান।
রোববার (১১ আগস্ট) বিকেল ৩টায় জেলার সাধারণ সংবাদকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দুদফা দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হন।
মানববন্ধনে বলা হয়, দীর্ঘ দিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে কুক্ষিগত করার পাঁয়তারায় যোগ্যদের প্রেসক্লাবে অন্তর্ভুক্ত করা করা হয়নি। তাদের অন্তর্ভুক্ত করে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে হবে।
গণমাধ্যম কর্মীরা বলেন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সর্বশেষ নির্বাচনের পর নির্বাচিত কমিটি ক্লাবের সদস্য ছাড়া সব গণমাধ্যম কর্মীদের ক্লাবে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব জেলার সাধারণ সাংবাদিকদের অধিকার হরণ করে স্বার্থান্বেষীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। প্রকৃত সাংবাদিকদের বাইরে রেখে দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে ক্লাবকে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে।
তারা আরও বলেন, সরাসরি রাজনীতি করে ও দলীয় সমর্থনে নির্বাচিত পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ প্রেসক্লাবের নির্বাহী কমিটির পদে রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক আবুল হাশেম ও আতিয়ার রহমান এবং একই প্রতিষ্ঠানের শারীরিক প্রশিক্ষক ইসলাম রকিব সরকারি চাকরি ও এমপিওভুক্ত চাকরি করেও এ ক্লাবের নির্বাহী পদে আছেন। শুধু তাই নয়, ক্লাবের গঠনতন্ত্র না মেনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর যোগ্য সংবাদকর্মীদের সদস্য পদ দেওয়া থেকেও বিরত রয়েছে প্রভাবশালী কয়েকজন।
সংবাদ কর্মীরা বলেন, ক্লাবের গঠনতন্ত্রে স্থানীয় গণমাধ্যমের দুজন করে প্রতিনিধিকে সহযোগী সদস্য করে অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। তবে অযোগ্যরা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অনায়াসেই ক্লাবের সদস্য পদসহ গুরত্বপূর্ণ পদেও স্থান পেয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবকে নিরপেক্ষ করার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার দাবি তাদেরও। সে কারণেই তারা সংবাদ কর্মীদের আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গার অন্যতম সমন্বয়ক সাফফাতুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যম কর্মী ভাইয়েরা সত্য প্রকাশে কাজ করেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আমরা দেখেছি, যারা সত্য প্রকাশে কাজ করতে চেয়েছেন তাদেকে বাধা দেওয়া হয়েছে। প্রেসক্লাব থেকে আমাদের ন্যয্য দাবিতে করা আন্দোলনে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি। ক্ষমতাসীন দল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক প্রভাবের স্থান থাকায় ক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় সংবাদ কর্মীরা অন্য সাধারণ সংবাদ কর্মীদের কাজেও বাধা দিয়েছেন।
সাফফাতুল বলেন, আমরা চাই স্বচ্ছ প্রেসক্লাব, যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে। সত্য প্রকাশে সংবাদ কর্মীরা থাকবেন নির্ভীক। আমরা ক্লাবের নেতৃত্বে যোগ্যদের স্থান দেওয়া ও আগের কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ দুই দফা দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আমরা পরে আরও বড় কর্মসূচি নিয়ে ক্লাবের সামনে সমবেত হব।
এদিকে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচির খবর পেয়ে সেখানে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি। তিনি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিছুক্ষণ পর সেখানে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফও উপস্থিত হন। তারা সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।
তবে আন্দোলনরত গণমাধ্যম কর্মীরা বলছেন, দাবি মেনে না নেওয়া হলে সোমবারই বড় পরিসরে কর্মসূচি দেওয়া হবে। চুয়াডাঙ্গার জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিকসহ উপজেলা পর্যায়ের গণমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন প্রেসক্লাব এসব দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।
মানববন্ধনে চুয়াডাঙ্গার গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সাংবাদিক হুসাইন মালিক, মাহফুজ মামুন, সুস্থির আজাদ, আহসান আলম, সাঈফ জাহান, মেহেরাব্বিন সানভী, আলমগীর হোসেন, আজাদুল ইসলাম আজাদ, এফ এ আলমগীর, রুদ্র রাসেল, বজলুল আলম জীবন, সাইফুল ইসলাম, সাকিবুর রহমান সাকিব, সাকিব আল হাসানসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/টিআর