নওগাঁয় ডাকাত আতঙ্ক
১২ আগস্ট ২০২৪ ০৮:১০
নওগাঁ: তিন ট্রাক লাল গামছা পরিহিত ডাকাত, তিন নৌকা ডাকাত; এসেছে অমুক জায়গায়, এখনই চলে গেল অমুক জায়গায়; আপনারা সজাগ হোন, মাইকিং করুন— এমন ধরনেরই প্রচারণা চলছে গত কয়েকদিন ধরে। আর তাতে আতঙ্কত ছড়াচ্ছে নওগাঁবাসীর মধ্যে।
সেই আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেতে কোথাও কোথাও দলবদ্ধ হয়ে হাতে লাঠি নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন এলাকা। আর ফেসবুকে জানান দিচ্ছেন, আমরা আছি। এভাবেই আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নওগাঁ শহরসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, এখন পর্যন্ত জেলায় ডাকাতির খবর তেমন একটা মেলেনি। তবে প্রতি রাতেই এখানে-ওখানে ডাকাত পড়ছে বলে খবর ছড়াচ্ছে। এসব উড়ো খবরকে উড়িয়েও দিতে পারছেন না তারা। কারণ সত্যি সত্যি ডাকাত পড়লে তখন প্রতিরোধের উপায় থাকবে না। মাঠে পুলিশ এখনো সক্রিয় না থাকার কারণে ডাকাতি নিয়ে এমন গুজব ও তা থেকে আতঙ্কের মাত্রা বাড়ছে বলেই মনে করছেন তারা। এর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি রয়েছে সেনাবাহিনীর কারণে। খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যাচ্ছেন বিভিন্ন এলাকায়।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় এক অস্থির পরিবেশ। থানাগুলোতে ব্যাপকভাবে হামলা হওয়ায় পুলিশ সদস্যরা থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখেন। দুয়েক দিন হলো কেবল বিভিন্ন থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নওগাঁর ১১টি থানাতেও সীমিত আকারে শুরু হয়েছে কার্যক্রম।
নওগাঁ শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার রকন বলেন, ডাকাত আতঙ্কের খবরে আমরা দুয়েকদিন রাত জেগে পাহারা দিয়েছি। এখন আর দিই না। কারণ কোথাও এমন কোনো ঘটনার খবর পাইনি।
কালিতলা নিবাসী প্রদ্যুৎ বলেন, কাল রাতেও (শনিবার রাতে) আমরা ডাকাত আতঙ্কে ছিলাম। এলাকার জনগণ পাহারায় ছিল। তাই কোনো অসুবিধা হয়নি। তবে আমরা এই আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে চাই না।
কুমাইগাড়ী এলাকার সিরাজ বলেন, আমরা ডাকাত আতঙ্কে আছি। তাই প্রতিটি বাড়ি থেকে একজন করে নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে রাতে পাহারা দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত কারও বাড়িতে ডাকাতি হয়নি। কিন্তু যেভাবে খবর পাচ্ছি, কবে কখন কোথায় ডাকাতি হয়, বলা তো যায় না।
ডাকাতের আক্রমণের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন নওগাঁ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক নান্নু। তিনি বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ গুজব। একটি মহল প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। আমরা জেলা বিএনপি সজাগ আছি। জেলাজুড়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিএনপির নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে পাহারা দিতে বলা হয়েছে। কোনো গুজবে যেন কেউ কান না দেন।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডাকাতের নামে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। এ মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে কোথাও কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা গ্রুপের সন্দেহজনক গতিবিধি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অথবা সেনাবাহিনীকে জানাতে হবে। এরই মধ্যে জেলা পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে রাতে পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছে। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, সবার আগে পুলিশের কর্মস্থলকে শতভাগ নিরাপদ করতে হবে। আইন অনুযায়ী পুলিশকে কাজ করার পরিবেশ করে দিতে হবে। পুলিশ পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারলেই খুব দ্রুত জনগণের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশ আগে যেমন নিয়োজিত ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।
সারাবাংলা/টিআর