ঢাকা: দেশের সব রাজনৈতিক দলই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করে আসছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নেতারা। এবারও সরকার পরিবর্তনের পরপরই ২৭৮টি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে বলে জানান তারা। বলেছেন, এসব পরিবারকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
হিন্দু মহাজোটের নেতারা আরও বলেন, আগামী দেড় মাসের মধ্যেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা হবে। দুর্গা পূজার মধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সরকার পরিবর্তনের সময় হামলার ঘটনার বিচারসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জাল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের নেতারা এসব কথা বলেন।
জোট নেতারা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত কয়েকদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ে ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জোরপূর্বক জমি দখল করে দেশত্যাগের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যেন একাত্তরের পুনরাবৃত্তি। কোনো মানুষ নয়, এগুলো হিন্দু ধর্মের ওপর সুস্পষ্ট আঘাত।
হামলার তথ্য তুলে ধরে জোট নেতারা বলেন, গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত ৪৮টি জেলায় ২৭৮টি হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। বিগত সময়ে যারা সরকারে ছিল, সেসব রাজনৈতিক দলের কাছে বারবার বলার পরও আমাদের কোনো দাবি পূরণ করা হয়নি। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ করবে।
হিন্দু মহাজোটের নেতারা আরও বলেন, আমরা লক্ষ করেছি ও দেখেছি, হিন্দু মহাজোটের নাম ব্যবহার করে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বক্তব্য দিয়েছেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনো হামলা হয়নি। কিন্তু তিনি হিন্দু মহাজোট থেকে বহিষ্কৃত। তার এই বক্তব্যের নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। হিন্দু মহাজোট রাজনৈতিক নিরপেক্ষ হিন্দু অধিকার আদায়ের সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে খুশি করা বা কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হিন্দু মহাজোটের কাজ নয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হিন্দু মহাজোটের মূল আদর্শ। এ জন্য আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ ও পালন করে এমন ২৩টি ধর্মীয় ও জাতিগত সংগঠনকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ২৩ দলীয় মোর্চাভুক্ত সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোট যে সাত দাবি পেশ করেছে সেগুলো হলো—
- দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহতম সাম্প্রদায়িক আক্রমণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে;
- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন করতে হবে;
- মন্দির ও বসত বাড়ি সরকারি খরচে পুনর্স্থাপন করতে হবে;
- দ্রুত বিচার ট্র্যইবুনালে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে;
- ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সালের চলতি দিন পর্যন্ত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে;
- আসন্ন দুর্গা পূজায় তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করতে হবে; এবং
- সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ড. প্রভাস চন্দ্র রায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন নির্বাহী সভাপতি সুখ্যাত চন্দ্র বিশ্বাস ও প্রধান সমন্বয়কারী ড. সোনালী দাস।
মহাজোটের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রনজিত কুমার মুখা, প্রভাস চন্দ্র মন্ডল, তপন হাওলাদার, জগন্নাথ হালদার, সুনীল মালাকার, সঞ্জয় কুমার রায়, যুগ্ম মহাসচিব অখিল মন্ডল, শিপন কুমার বিশ্বাস ফনিভুষণ হালদার, শ্যামল রঞ্জন মন্ডল, সমীর সংকার, সুশীল কুমার মিত্র ডা. নিমাই চন্দ্র অর্থ্য, কেনজ দাস, হারবেন বিশ্বাস ও কেনেডি ঘোষ; সাংগঠনিক সম্পাদক আশীষ বাড়ই, সঞ্জয় কুমার সাহা ও খগেন সূত্রধর; মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মৃদুলা বিশ্বাস ও নন্দীতা ঘরামী; জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের প্রধান সমন্বয়কারী পংকজ হালদার, সভাপতি প্রদীপ কান্তি দে, সাধারণ সম্পাদক রাজেস নাহা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাধব দাস; হিন্দু ছাত্র মাহাজোটের সভাপতি অনুপম দাস, নির্বাহী সভাপতি অভিজিৎ রায় ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব সাহাসহ অন্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।