অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত জানিয়ে সাবেক বিচারকদের ১২ দফা
১৩ আগস্ট ২০২৪ ২১:১১
ঢাকা: নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বাগত ও অভিনন্দন জানিয়ে বিচার বিভাগ পুনর্গঠন ও সংস্কারের লক্ষ্যে ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে সাবেক বিচারকেরা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ ফিরোজ আলম এই ১২ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক বিচারকেরা বলেন, আমরা মনে করি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার দেশ ও জাতির মঙ্গলের জন্য যা করতে ব্যর্থ হয়েছে, সৎ, সাহসী, ও নিরপেক্ষ স্বনামধন্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে সক্ষম হবেন। এবং জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মাসদার হোসেন, আ. রহমান, ফিরোজ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, আবুল হোসেন খান, বিচারক আবুল হোসেন খন্দকার, মুসতাক আহমেদ, স ম আব্দুর রব প্রমুখ।
বিচারকদের ১২ দফা প্রস্তাবনায় বলা হয়-
১. বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত ও দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনের সংশোধন আনয়ন।
২. বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচারকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান।
৩. বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতিসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার নীতিমালা প্রনয়ণ ও অন্যান্য কার্যাদি সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় গঠন।
৪. মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন।
৫. সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন।
৬. যেসব বিচারকগণ আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকাশ্যে সরকারকে সমর্থন করে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী কাজ করেছে, জামিনযোগ্য মামলায় জামিন না দিয়ে শত সহস্র নিষ্পাপ মানুষকে কারাগারে পাঠিয়েছে, রিমান্ড আদেশ দিয়ে হয়রানি ও নির্যাতনের সুযোগ করে দিয়েছে। এবং ফরমায়েশী রায় দিয়ে শাস্তি দিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ।
৭. বিচারিক আদালতের সবস্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ন্যায়বিচার পরিপন্থী স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষে কাজ করা বিচারকদের বদলি করে সেখানে সৎ ও নিরপেক্ষ বিচারকদের পদায়ন।
৮. সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এবং আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত স্বৈরাচারী সরকারের সহযোগী বিশেষ করে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম সারোয়ার, যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা ও শেখ গোলাম মাহবুব, মাহাবুবুর রহমান সরকার (বর্তমানে জেলা জজ, নরসিংদী), এ.এইচ.এম. হাবিবুর রহমান জিন্নাহ (সদস্য, যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল), শহিদুল আলম ঝিনুক (তথ্য কমিশনার ও সাবেক আই.জি.আর)সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সকল কর্মকর্তাকে অবিলম্বে অপসারণ করে সৎ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান এবং উক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৯. চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেওয়া সকল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে সেখানে যোগ্য ও নিরপেক্ষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান।
১০. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত বিচারপতিদের যারা শপথ ভঙ্গ করে, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিদায়ী স্বৈরশাসককে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, যাদের কারণে বিচার বিভাগ আজ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে, তাদের অপসারণপূ করে বিচারের আওতায় আনয়ন। আপিল বিভাগে কর্মরত থেকে যেসব বিচারপতি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও শপথ ভঙ্গ করে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানসহ স্বৈরশাসককে তাদের অপকর্মে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনয়ন।
১১. ভবিষ্যৎ স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা বিলুপ্তির এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংবিধানের আমূল সংস্করণ আনয়নের দাবি জানাচ্ছি।
১২. অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে ইচ্ছুক। বর্তমান সরকার যদি প্রয়োজন মনে করেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের ওপর যদি কোনো দায়িত্ব অর্পণ করেন তবে তারা ওই দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে সুষ্ঠুভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে সম্মত আছেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম