Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কক্সবাজার সৈকতে শিশু দিয়ে বডি ম্যাসাজ

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৩০

কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ির চেয়ারে বসা দুই পর্যটককে বডি ম্যাসাজ করছিল সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। তারা বডি ম্যাসাজের পাশাপাশি গানও শুনাচ্ছিলেন। গান-বডি ম্যাসাজ নিয়ে উভয়কে ফুরফুরে মেজাজ দেখা গেলেও পাশের চেয়ারে বসা অনেক পর্যটক এতে বিরক্ত। বেশিরভাগ পর্যটক এই দৃশ্য আড় চোখে দেখে পাশ কেটে গেলেও পরিবার নিয়ে চেয়ারে বসা রিপন চৌধুরী নামে এক পর্যটক বলেই ফেললেন, ‘কমনসেন্সের অভাব’। দৃশ্যটি চোখে পড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে।

বিজ্ঞাপন

বডি ম্যাসাজ করা ওই শিশু ও পর্যটক-উভয়েই জানায়, ২০০ টাকার বিনিময়ে তারা বডি ম্যাসাজ করাচ্ছেন এবং গান শুনছেন।

আলাপকালে ওই শিশু জানান, তারা নিয়মিত এই কাজ করে দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। অনেক সময় আরো বেশি আয় হয়। লাবণী থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত অন্তত সৈকতে এ কাজে জড়িত ১৫ থেকে ২০ জন শিশু রয়েছে। শিশুরা নিজেরাই পর্যটকদের বডি ম্যাসাজ ও গান শুনানোর অফার করে। বেশির ভাগ পর্যটক ফিরিয়ে দিলেও কিছু কিছু পর্যটক ঠিকই তাদের অফার গ্রহণ করেন।

এ নিয়ে প্রশাসন বাধা দেয় কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে এক শিশু বলেন, পুলিশ (ট্যুরিস্ট পুলিশ) আসার আগেই তারা পালিয়ে যান। অনেক সময় অর্ধেক বডি ম্যাসাজের মধ্যে পালিয়ে যেতে হয়। আবার অনেকে ধরাও খায়।

সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে শিশুদের দিয়ে বডি ম্যাসাজ করানোকে কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এক পর্যটক বলেন, ‘কে কি বলছে-এসব দেখার সময় নেই। ভাল লাগছে, তাই করছি। সাথে গানও শুনতে পারছি। এছাড়া নিজের টাকায় কাজ করাচ্ছি। সুতরাং কার ভাল লাগছে, বা খারাপ লাগছে এসব দেখার সময় নেই’। যদিও অপর পর্যটক যুবক বলেন ভিন্ন কথা। তার মতে, জনসম্মুখে এভাবে বডি মেসেজ করানো উচিৎ হয়নি। এ জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

পাশের চেয়ার পরিবার নিয়ে বসা পর্যটক রিপন চৌধুরী বলেন, ‘এই বিষয়টি খুবই বাজে দেখাচ্ছিল। এদিকে পরিবার নিয়ে সমুদ্র সৈকতের মনোরম দৃশ্য দেখতে বসছি। তার মধ্যে বেসুরা ও অশ্লীল গান গাইতে গাইতে বডি ম্যাসাজ করছিল দুই শিশু। বিষয়টি হাস্যকরের চেয়ে বিরক্তিকর বেশি।’

পর্যটক ইয়াছিন চৌধুরী বলেন, ‘বডি ম্যাসাজ করতে ইচ্ছে করলে স্পা’ সেন্টারে যেতে পারে। তাই বলে সমুদ্র সৈকতে উন্মুক্ত স্থানে বডি ম্যাসাজ করাবে? তাও আবার শিশুদের দিয়ে। এটি কুরুচি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছাড়া কিছুই নয়। এই দৃশ্য শুধু দেখতেই খারাপ লাগছেনা, পাশাপাশি পর্যটন নগরীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যাতে এই শিশুরাও পর্যটকদের এমন অফার না দেয়। একইভাবে পর্যটকদের বলতে হবে শিশুদের দিয়ে এমন রুচিহীন কাজ না করার।’

বিজ্ঞাপন

পর্যটন সেবী স্থানীয় ব্যবসায়ী রমজান আলী জানান, ‘সব পর্যটক এমন কাজ করে না। কিছু অতি উৎসাহী, বোকা ও রুচিহীন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পর্যটক এমনটা করে। এই শিশুগুলো টাকার জন্য এই কাজ করে। শিশুদের মধ্যে অনেকে বডি ম্যাসাজ করার সময় কৌশলে পর্যটকের টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে। পরে পর্যটন নগরীর বদনাম হয়। এমনও দেখা গেছে, পর্যটকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে শিশুদের বারণ করতে গিয়ে অনেক সময় উল্টো পর্যটক থেকেই গালি শুনতে হয়। পর্যটকরা এই শহরের মেহমান। তাদের তেমন কিছু বলা যায় না। এ বিষয়ে পর্যটকদের সচেতন হওয়া দরকার’।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মনজুর মোর্শেদ বলেন, ‘কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিছু পর্যটক নিজেদের সচেতনতার অভাবে সমস্যায় পড়েন এবং সমস্যার সৃষ্টি করেন। উন্মুক্ত স্থানে শিশুদের দিয়ে এভাবে বডি ম্যাসাজ কোনভাবেই কাম্য নয়। এটি অন্য পর্যটকদের জন্য বিরক্তের কারণ। এতে সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হয়।’

তিনি বলেন, ‘পর্যটক যেন কেউ বিরক্ত না হয় সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। তখনই একটি নিরাপদ-সুন্দর পর্যটন নগরী বিনির্মিত হবে।’

সারাবাংলা/এনইউ

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটক বডি ম্যাসাজ শিশু সমুদ্র সৈকত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর