বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর, তিন দিন বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে
১৮ আগস্ট ২০২৪ ১০:৫৯
ঢাকা: উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপের ফলে আবারও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। এর প্রভাবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী তিন দিন বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে সাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে প্রচুর মেঘ তৈরি হয়েছে। ফলে আগামী তিন-চার দিন সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে। মাসের বাকি সময়জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি থাকতে পারে।’
শনিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সাগরে অবস্থানরত নৌযানগুলোকে উপকূলের কাছে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গভীর সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ ঢাকা, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার ওপর দিয়ে দমকা হাওয়ার পাশাপাশি বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে এক নম্বর (পুনঃ) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
গতকাল দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৯৬ মিলিমিটার। বান্দরবানে ১৪৩ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ১৩৪ মিলিমিটার, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ১২৫ মিলিমিটার, ফেনীতে ১১৩ মিলিমিটার, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ১০৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৯৯ মিলিমিটার, আমবাগানে ৯৯ মিলিমিটার, নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে ৯৮ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের হাতিয়ায় ৭৮ মিলিমিটার, টেকনাফে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ছাড়া ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনার কয়রা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, সিরাজগঞ্জের তাড়াশসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও গতকাল এখানে বৃষ্টি হয়েছে হালকা বৃষ্টি হয়েছে, যার পরিমাণ এক মিলিমিটার।
রংপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, ঢাকা ও খুলনা বিভাগে গতকাল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম ছিল, কোনো কোনো বিভাগে ছিলও না। এতে এসব বিভাগে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি ছিল। শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলা, চুয়াডাঙ্গায় গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাঙামাটিতে ২৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে তিন দিন দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছিল। কোথাও কোথাও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তাপপ্রবাহের কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছায়। সারা দেশের আকাশে মেঘ বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। আগামীকাল তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আজ সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে। রোববার ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে। আজ দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া প্রবাহিত হতে পারে।
সারাবাংলা/একে