গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিতসহ ১২ দাবি সিএআই’র
৩০ আগস্ট ২০২৪ ১৭:৪১
ঢাকা: গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ ও দ্রুত মুক্তি নিশ্চিতসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে কাউন্সিল অ্যাগাইনস্ট ইনজাস্টিজ (সিএআই) নামের একটি সংগঠন।
‘গুম একটি গুরুতর অপরাধ’ শিরোনামে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) আয়োজিত এক নাগরিক সভায় সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানান। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম মিলনায়তনে এ নাগরিক সভার আয়োজন করে সিএআই।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় ভয়াবহ নির্যাতন ও ‘আয়নাঘর’ নামক স্থানে ৪১ দিন ধরে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার আহমেদ রফিক, গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইফাজ আহমেদ চৌধুরী, প্রকৌশলী সাকিব বিন কামাল গুম হওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক বেলাল হোসেন, মায়ের ডাক সংগঠনের সমন্বয়ক মঞ্জুর রশিদ ইসা, কাউন্সিল এগেইনস্ট ইনজাস্টিসের আহ্বায়ক শের মোহাম্মদ প্রমুখ।
শোক সভা থেকে সরকারি বাহিনীসমূহের বেআইনি আটক, জোরপূর্বক শুম এবং নির্যাতনের বিষয়ে চলমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো:
১. পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন: র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট (এটিইউ), এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)-এর মতো বিশেষ বাহিনীর বেআইনি কার্যক্রম নজরদারি ও প্রতিরোধের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি স্থাপন করতে হবে। এই কমিটিতে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যারা ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০০৯ সাল থেকে হাসিনা সরকারের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার, বিশেষ করে র্যাব দ্বারা সংঘটিত জোরপূর্বক শুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ সহ একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করতে হবে।
২. গোপন নির্যাতন কক্ষ উন্মোচন এবং সিলগালা: বিভিন্ন অঞ্চলে র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন গোপন নির্যাতন কক্ষগুলোকে জাতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে উন্মোচিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এদের ব্যবহার প্রতিরোধ করতে সেগুলো চিরতরের জন্য সিলগালা করে দিতে হবে। এই কক্ষগুলো যেন পুনরায় ব্যবহার না হয় সে জন্য পরিপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. ভুক্তভোগীদের তালিকা প্রকাশ এবং মুক্তি: জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের মুক্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
৪. মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার: র্যাব কর্তৃক দায়ের করা সকল মিথ্যা ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. ওয়ারেন্টবিহীন গ্রেফতার সম্পর্কিত আইন: ওযারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণ থাকা আবশ্যক এবং এটি পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এই মর্মে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ নিয়ম লঙ্ঘনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
৬. পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ: জোরপূর্বক গুমের শিকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭. মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা: মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত সকল ব্যক্তিকে জনগণের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৮. বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন: জোরপূর্বক গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য তড়িৎ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
৯. আন্তর্জাতিক তদারকি কমিটি: জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে যাতে এই অপরাধমূলক কার্যকলাপগুলি সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করা যায়।
১০. স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন: দ্রুততম সময়ের ভেতর স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তীমূলক একটি কমিশন গঠন করতে হবে। যারা বিগত দিন গুলির সমস্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও আটকের বিচার নিশ্চিত করবেন। এই কমিশনকে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিতে হবে, যেন তাদের পরিবার ও তাদের জান মালের উপর কোন রকম আক্রমণ না হয়। বাহিনী সমূহের অভ্যন্তরীণ সাজা বাতিল করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি শাস্তি নিশ্চিত নিশ্চি করতে হবে।
১১. ইনডেমনিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে।
১২. পুরাতন অধ্যাদেশ বাতিল: জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল বাহিনীর পুরাতন অধ্যাদেশ বাতিল করে, নতুন করে সংস্কার করতে হবে। সময়োপযোগী এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করে এমন অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস কাউন্সিল অ্যাগাইনস্ট ইনজাস্টিজ