কাচকি-চাপিলার সমাগমে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে কাপ্তাই হ্রদে
১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৬
রাঙ্গামাটি: ভোর থেকেই জমজমাট রাঙ্গামাটির ফিশারি ঘাট। কাচকি-চাপিলাসহ নানা মাছের সমাগম। বিভিন্ন উপজেলা থেকে জেলেরা আসছেন একের পর এক মাছবোঝাই ট্রলার নিয়ে। ব্যবসায়ীরা বুঝে নিচ্ছেন মাছ। শুল্কহার আদায় শেষে বরফ দিয়ে সেই মাছ প্রক্রিয়াজাত করার পর চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ফিশারি ঘাটে জেলে থেকে শুরু করে মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের সবার মুখেই হাসির ছোঁয়া।
দীর্ঘ চার মাস সাত দিন পর এমন কর্মচঞ্চল রূপে ফিরেছে রাঙ্গামাটির ফিশারি ঘাট তথা বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। একই চিত্র দেখা গেছে বিভিন্ন উপজেলার উপকেন্দ্রগুলোতে। প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদেও। চার মাস সাত দিন পর শুরু হয়েছে মাছ শিকার।
১ মে থেকে বন্ধ থাকার পর শনিবার (৩১ আগস্ট) দিবাগত মধ্যরাত তথা রোববারের (১ সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রহর থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের সুযোগ পেয়েছেন জেলেরা। ভোর থেকেই বিপণন কেন্দ্রগুলোতে মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা। জেলা শহরের প্রধান বিপণণকেন্দ্রসহ কাপ্তাই, মারিশ্যা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ির উপকেন্দ্রে ভোর থেকেই মাছ নিয়ে হাজির মৎস্যজীবীরা। এরপর সেই মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বরফ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে শ্রমিকরা তুলে দিতে থাকেন পরিবহণে।
কাপ্তাই হ্রদে জেলেদের জন্য মাছ ধরার সুযোগ উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজে ফিরেছেন মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরাও। বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর মাছের আহরণ ও রাজস্ব আদায় গত বছর থেকে বাড়বে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোর থেকেই রাঙ্গামাটি বিপণনকেন্দ্রে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মাছ নিয়ে আসছেন জেলেরা। এরপর ব্যবসায়ীদের কাছে সেই মাছ বুঝিয়ে দেন তারা।
বিএফডিসির পন্টুনে হ্রদের মাছের শুল্কহার আদায় শেষে বরফ দিয়ে করা হয় প্রক্রিয়াজাত। এরপর ট্রাক-পিকআপে করে এসব মাছ চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এর বেশির ভাগের গন্তব্যই অবশ্য রাজধানী ঢাকা। বিপণনকেন্দ্রের পন্টুনগুলোতে মাছ অবতরণ করা হয় ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা।
মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হ্রদে পানি বেশি থাকায় মাছ কম ধরা পড়েছে। তারপরও প্রথম দিনে মাছ আহরণের পরিমাণে খুশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা। প্রথম দিনে কাচকি ও চাপিলার আধিক্য ছিল সবচেয়ে বেশি। এভাবে বাকিটা সময় মাছ আহরণ হলে ব্যবসায়ীসহ এই খাতের সঙ্গে যুক্ত সবাই লাভবান হবেন।
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য উন্নয়ন ও বিপণনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. আশরাফুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছি অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদের আইড় মাছের আহরণ ও আকার বেড়েছে। তবে বিশেষ করে কাচকি ও চাপিলা মাছ ছোট পাওয়া যাচ্ছে।’
বিএফডিসি সূত্র জানিয়েছে, প্রথম দিনে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ৬৫ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে ১৩ লাখ টাকার বেশি শুল্ক আদায় হয়েছে। এদিকে গত বছরের প্রথম দিনে ১২৭ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ হয়েছিল। সে হিসাবে এবার প্রথম দিনে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের কিছু বেশি মাছ অবতরণ হয়েছে। তবে বিপণন কর্মকর্তারা বলছেন, হ্রদের পানি কিছুটা কমলে মাছ আহরণ বাড়বে। সার্বিকভাবে চলতি মৌসুমের মাছ আহরণ বেশি হবে বলে আশা করছেন তারা।
আশরাফুল আলম আরও বলেন, ‘অন্য বছরের চেয়ে এবার কাপ্তাই হ্রদে পানি অনেকটা বেশি। এ কারণে জেলেরা যেসব জায়গায় জাল ফেলে থাকেন সেখানে ওই পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে হ্রদের পানি ঘোলা হওয়ায় মাছ পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে বাড়তে পারেনি। তবে আমরা আশাবাদী চলতি, মৌসুমে মাছ আহরণ ও আমাদের শুল্কহার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
প্রচলিত রীতি অনুসারে প্রতি বছরের ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জেলা প্রশাসন। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিতসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে হ্রদের মাছ বিপণনসহ স্থানীয় বরফ কলগুলোও বন্ধ রাখা হয়।
চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের ছয় দিন আগে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যেও হ্রদের পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে না বাড়লে প্রথম দফায় ১৫ দিন ও দ্বিতীয় দফায় ২৩ দিন হ্রদে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়। নির্ধারিত তিন মাস সময়ের পর আরও একমাস সাত দিন পর শুরু হলো কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার।
সারাবাংলা/টিআর
কাপ্তাই হ্রদ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মৎস্যজীবী মাছ আহরণ মাছ শিকার রাঙ্গামাটি