গুমের অভিযোগে ডিআইজিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৫১
যশোর: শহরের শংকরপুরের যুবক সাইদুল ইসলাম সাঈদকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান, এসআই ও কাউন্সিলরসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অপহৃত সাঈদের পিতা কাজী তৌহিদুল ইসলাম ওরফে খোকন কাজী বাদী হয়ে এ মামলা করেছেন।
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার আদেশ দিয়েছেন কোতয়ালি থানার ওসিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী আমিনুর রহমান।
আসামিরা হলো, যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান, এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এএসআই হাসানুর রহমান, এইসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সি, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহম্মেদ, টিএসআই রফিক, কনস্টেবল আরিফুজ্জামন, হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, ড্রাইভার মিজান শেখ, মাহমুদুর রহমান, টোকন হোসেন, যশোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিল গোলাম মোস্তফা, শহরের শংকরপুরের সাদেক দারোগার মোড় এলাকার মৃত রোস্তম আলীর ছেলে নুর ইসলাম নুরু, মৃত খলিল মিয়ার ছেলে আনিস, মুরগির ফার্ম এলাকার মৃত বাবলুর ছেলে অগ্রো, রায়পাড়ার মৃত কাওছার আলীর ছেলে হাসমত, হোসেন আলীর ছেলে মাসুম ও গোলপাতা মসজিদ এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে খালেদুর রহমান চন্নু।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকালে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন যশোর পৌরপার্কে বেড়াতে যায়। এ সংবাদ তৎকালিন পুলিশ সুপার পেয়ে তার নির্দেশে অপর পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা সাঈদ ও শাওনকে গ্রেফতার করে। সাঈদ ও শাওনের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে খোকন কাজী ও তার স্ত্রী দ্রুত পৌরপার্কের গেটে এসে দেখেন তাদের পুলিশ গাড়িতে উঠাচ্ছে। সাঈদকে গ্রেফতারের বিষয়টি এসআই এইচএম শহিদুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা থানায় এসে কথা বলতে বলেন। তাৎক্ষনিক থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ সাঈদের মা ও পিতাকে থানায় ঢুকতে দেয়নি।
থানার গেটে অবস্থান কালে সাঈদের মা ও পিতার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দেন এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম ও এসআই আমির হোসেন। অন্যথায় তাদের দুই জনকে মেরে লাশ গুম করে দেবেন বলে হুমকি দেন।
৭ এপ্রিল সাঈদের মা হিরা খাতুন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন ছেলে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। পত্রিকার এ সংবাদের সত্যতা জানতে থানায় গেলে সাঈদের মা হিরার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ। অপহৃত সাঈদের মা সংবাদ সম্মেলন করে ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
এ ঘটনায় অপহৃত সাঈদের মা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অপহৃত সাঈদকে ফিরিয়ে দিতে কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা হিরা খাতুনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। হিরা খাতুনের কাছ থেকে তারা ১০ লাখ টাকা নিয়ে হিরা খাতুনকে মামলা প্রত্যাহারর জন্য চাপ দেয়। হিরা খাতুন মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় তাকে এসপি অফিসে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে হিরা খাতুন বৈদ্যুতিক শকে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আর আজ আবধি অপহৃত সাঈদকে আর ফিরে আসেনি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরবর্তীতে মামলা করার সাহস হয়নি। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।
সারাবাংলা/এমও