বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার শঙ্কা, ঝুঁকি নিয়ে হলে থাকছেন ইবি ছাত্রীরা
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩১
ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকে ফের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে দুর্ঘটনার পর ছাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর ছাত্রীদের ঝুঁকির কথা বলে অন্য স্থানে থাকতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
তবে থাকার ব্যবস্থা না হওয়ায় বৈদ্যুতিক সংযোগ সাময়িক মেরামত করে ছাত্রীদের ঝুঁকি নিয়েই হলে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ধারণক্ষমতা হলেও বর্তমানে প্রায় দেড়শো ছাত্রী থাকছেন বলে জানা গেছে।
ছাত্রীদের দাবি অনুযায়ী হলে সার্বক্ষণিক দুইজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকার কথা রয়েছে। তবে থাকবেন একজন। তিনি রাত ৯টার পর হলে আসবেন বলে হাউজ টিউটররা ছাত্রীদের জানিয়েছে।
এদিকে দুর্ঘটনার পর হলের আবাসিক শিক্ষক ও ডিনদের সঙ্গে ছাত্রীরা মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ও বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুই দফায় সাক্ষাৎ করেছেন। ছাত্রীরা ডিনদের সঙ্গে সাক্ষাতে চার দফা দাবি তুলে ধরেছেন।
দাবিগুলো হলো-
১. দুইজন ইলেকট্রেনেশিয়ান সব সময় হলে অবস্থান করা, বর্তমানে যে সমস্যা চলছে তা দুই ঘণ্টার ভেতরে সাময়িক ভাবে ঠিক করা,
২. হলের বাজেট কোথায় ব্যয় হয় তা শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বচ্ছ হিসাব পেশ করা।
৩. বর্তমানে যে সমস্যা চলছে তা স্থায়ীভাবে ঠিক করতে কত টাকা লাগবে এবং কত সময় লাগবে তা শনিবারের (৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যে উপস্থাপন করা।
এসব দাবি আদায়ে ছাত্রীরা শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে সব দাবি মানা না হলে অনশনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
ছাত্রীদের অভিযোগ, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকে প্রায়ই ছোট-বড় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা হয়। সর্বশেষ জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। সেসময় হলের তিনতলা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ মেরামত করার কথা থাকলেও দুই তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় মেরামতের নামে জোড়াতালি মেরামত করা হয়েছে। তাদের থাকার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে সেখানে থাকতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে হলটির কয়েকজন ছাত্রী বলেন, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) হঠাৎ সন্ধ্যার দিকে হলের লাইট বন্ধ হয়ে যায়। নিচ থেকে শব্দও হচ্ছিল। এর আগে দুর্ঘটনার কারণে কেউ আর সাহস করেনি সেখানে যাওয়ার। পরে হলের নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে জানাই। একজন ইলেকট্রিশিয়ান এসে ঠিক করে দিয়ে যায়। কিন্তু এটা তো স্থায়ী সমাধান না।
ছাত্রীরা বলেন, আমরা ডিনদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা আশ্রাফী স্যার আমাদের বলছিলেন তিনি জরুরি দায়িত্ব আছেন শুধু। জীবনের চেয়ে আর জরুরি কিছু কি আছে? আমাদের জীবনের কি কোনো দাম নেই? আমরা বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধান চাই।
প্রকৌশল দফতর ও হল প্রশাসন জানিয়েছে, খালেদা জিয়া হলের পুরোনো ব্লকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমদিকের ভবন। এই হলটার বয়স প্রায় ৩০ বছর। সেখানে যে ধরণের লোড পড়ে লাইনগুলো তেমন শক্তিশালী নয়। তাছাড়া লাইনগুলো অনেক পুরোনো হওয়ার কারণে বারবার এমন ঘটনা ঘটছে। সেখানে পুরো লাইন মেরামত করা জরুরি। এর জন্য বড় বাজেট প্রয়োজন।
হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এরশাদুল হক বলেন, হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবেন। ঝুঁকি আছে কি নেই এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করব না। ইঞ্জিনিয়াররাই এটা ভালো বুঝবেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, একটা তারের লুস কানেকশনের জন্য এই ঘটনার সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে সেই তারটি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ছাত্রীদের দাবি অনুযায়ী হলে সার্বক্ষণিক একজন ইলেকট্রিশিয়ান থাকবে। আপাতত ভয়ের কিছু নেই। তাছাড়া আমরা স্থায়ী সমাধানের জন্য কত টাকা লাগতে পারে এই নিয়ে একটা ইস্টিমেট করছি। ইস্টিমেট কর্তৃপক্ষকে দেব। তারা আর্থিক অনুমোদন দিলে আমরা কাজ শুরু করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, সার্ভিসিং করতে কেমন বাজেট লাগবে সেটা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীদের বলেছি। আশা করছি খুব দ্রুতই স্থায়ী সমাধান হবে।
সারাবাংলা/এনইউ