Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে কোন পদ্ধতিতে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:৪০

ঢাকা: দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক মাসের মাথায় পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বাকি চার নির্বাচন কমিশনার। রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছেন। ফলে এই মুহূর্তে দেশে কোনো নির্বাচন কমিশন নেই। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন কবে গঠন হবে, কোন পদ্ধতিতেই বা সেই কমিশন গঠন হবে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই সরকারি ও সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে আসীন কর্মকর্তারা একে একে সরে দাঁড়িয়েছেন, কাউকে কাউকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

বিজ্ঞাপন

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের মনোনীত ও পছন্দের ব্যক্তিরাই এসব পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সরকারের পতনের পর তাই তাদের সরে দাঁড়াতে হয়েছে। এর মধ্যেও প্রায় এক মাস দায়িত্বে বহাল ছিল নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান তার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের কথা। পরে রাতেই বঙ্গভবনের প্রেসউইং জানায়, রাষ্ট্রপতি সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

আড়াই বছরের নির্বাচন কমিশন

এর মধ্যে দিয়েই মূলত কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন আড়াই বছরের নির্বাচন কমিশন বিলুপ্ত হয়েছে। ২০২২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের ত্রয়োদশ সিইসি পদে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই দিনই সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খানকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির কাছে শপথ নিয়ে এই কমিশনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

আরও পড়ুন-

যে পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছিল ইসি

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রথমবারের মতো আইন প্রণয়ন করে সরকার।

ওই আইন অনুযায়ী ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) সভাপতি করে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সুধীজনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করা হয়। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করে কমিটি। সরাসরি ও ইমেইলের মাধ্যমে সার্চ কমিটির কাছে প্রায় পাঁচ শ নাম জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনের জন্য।

সার্চ কমিটির কাছে একাধিক প্রস্তাবনায় অনেকগুলো নামই একাধিকবার উঠে আসে। সেগুলো বাদ দিয়ে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকের পর আরও কিছু নাম যোগ হলে শেষ পর্যন্ত তালিকা দাঁড়ায় ৩২৯ জনের। দফায় দফায় বৈঠক করে সেখান থেকে প্রথমে ২০ জনের,ও পরে ২২ ফেব্রুয়ারি শেষ বৈঠক করে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে সার্চ কমিটি।

ওই ১০ জনের নামই কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করে। হিসাবে সিইসিসহ পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুজনের নাম প্রস্তাব করা হয়। সেই তালিকা থেকেই রাষ্ট্রপতি সিইসি ও বাকি চার নির্বাচন কমিশনারের নাম চূড়ান্ত করেন। তবে সার্চ কমিটি কোন ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছিল, সেটি প্রকাশ করা হয়নি।

কী আছে নির্বাচন কমিশন গঠন আইনে

স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে ২০২২ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। এর শিরোনাম রাখা হয় ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’।

এই আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রথমেই গঠন করতে হবে একটি সার্চ কমিটি বা অনুসন্ধান কমিটি। এই কমিটির সভাপতি হবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক, যাকে মনোনয়ন দেবেন প্রধান বিচারপতি।

ছয় সদস্যের সার্চ কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনয়নে হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি), বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক। রাষ্ট্রপতির মনোনয়নে যে দুজন সদস্য যুক্ত হবেন তাদের মধ্যে একজন থাকতে হবে নারী।

আইনে বলা হয়েছে, ন্যূনতম তিন সদস্য উপস্থিত হলে সার্চ কমিটির বৈঠকের কোরাম পূর্ণ হবে বলে বিবেচনা করা হবে। এই কমিটির সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সিদ্ধান্ত হবে। ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতি নির্ণায়ক ভোট দিতে পারবেন। এই কমিটি ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ জমা দেবে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম পেতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের কাছে নাম আহ্বান করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে দুজনের নাম সুপারিশ করবে এই কমিটি। ওই নামগুলোর মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।

সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশ করার জন্য আইনে তিনটি যোগ্যতা ও ছয়টি অযোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যোগ্যতাগুলো হলো—

  • তাদের বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে;
  • তাদের বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর; এবং
  • কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় কমপক্ষে ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য নাগরিকদের যেসব অযোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো—

  • আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে;
  • দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে;
  • কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে;
  • নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;
  • ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩’ বা ‘বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার, ১৯৭২’-এর অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে; এবং
  • আইন দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না— এমন পদ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে কবে

নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয়তা মূলতই যেকোনো নির্বাচন আয়োজনের জন্য। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে দেশে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদের মতো স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করা হয়েছে। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিংবা যেকোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলেই প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন। তবে সেই নির্বাচন শিগগিরই হবে, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি নিজে যেমন বলেছেন, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোও বলেছে— রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার প্রয়োজন। সেই সংস্কারগুলো করার পরই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সেই সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে। তারা যখন বলবে, তখনই অন্তর্বর্তী সরকর নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেবে। রাজনৈতিক দলগুলো এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করে কোনো সময়সীমা এখনো বেঁধে দেয়নি।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য ন্যূনতম এক বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া উচিত। কেউ কেউ এক থেকে তিন বছর সময়ের কথাও বলেছেন। তবে অনেকেই আবার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের ভিত্তিতে গঠিত সরকারের নৈতিক ভিত্তি থাকলেও গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য নির্বাচিত সরকারেরই দায়িত্বে থাকা উচিত।

সে ক্ষেত্রে আর্থিক খাতসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্রুতই নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তবে সব মহলের বিভিন্ন বক্তব্য বিশ্লেষণ করে বাস্তবতার নিরিখে বলা যায়, সরকার নির্বাচন আয়োজনের জন্য ন্যূনতম এক বছর সময় পেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন আইন নিয়ে প্রশ্ন

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিকল্প নেই— এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত সবাই। তবে বর্তমান আইনে নির্বাচন কমিশন গঠনের যে প্রক্রিয়া রয়েছে, সেটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনের পথে অন্তরায় বলে অভিমত অনেক বিশ্লেষকের।

তারা বলছেন, এই আইনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রথমে সার্চ কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির মধ্যে অন্তত চারজন সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত— আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং পিএসসির চেয়ারম্যান। বাস্তবতা বলছে, সাংবিধানিক পদ হলেও এসব পদে নিয়োগ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের আনুকূল্যে ও প্রভাবেই হয়ে থাকে।

কমিটির বাকি দুজন সদস্য নিয়োগের সম্পূর্ণ এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে। সংবিধান অনুযায়ী সেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের পরোক্ষ ভোটে। ফলে সংসদে কোনো দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলে রাষ্ট্রপতি শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলেরই একজন প্রার্থী হয়ে থাকেন। ফলে সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন সদস্যও সরকারের ইঙ্গিতে স্থান পেতে পারেন।

বিশ্লেষকরা বলেন, এ পদ্ধতিতে গঠিত সার্চ কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে যথেষ্টই প্রশ্ন থাকতে পারে। ফলে সেই কমিটি নির্বাচন কমিশনের জন্য যেসব নাম প্রস্তাব করবে, সেই নামগুলোতেও সরকারের প্রভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। ফলে বিদ্যমান আইনের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ হবে, সে প্রশ্ন অবান্তর নয়।

নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন

কেবল নির্বাচন কমিশন নয়, দেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো একসময় দলনিরপেক্ষ ছিল। পরবর্তী সময়ে সেই নির্বাচনও দলীয় প্রতীকের অধীনে আয়োজনের বিধান করা হয়। বিশ্লেষকদের অনেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে আগের মতোই দলীয় প্রতীক ছাড়াই আয়োজনের পক্ষে মত দিয়ে থাকেন।

প্রশ্ন রয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও। বিভিন্ন সময়েই রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ পদ্ধতি প্রবর্তনের সুপারিশ বা প্রস্তাবনা হাজির করেছে। প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাবও এসেছে বিভিন্ন সময়। রয়েছে সংসদে বিভিন্ন দলের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রস্তাবনা। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণের বিপরীতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব হবে।

দেশে শুরু থেকেই ৩০০ সংসদীয় আসনে একই দিনে একযোগে ভোটগ্রহণ হয়ে থাকে। এই ভোটগ্রহণ এলাকা ভাগ করে একাধিক ধাপে গ্রহণের প্রস্তাবনা এসেছে অনেক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে।

জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিতর্ক রয়েছে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েও। দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচন হবে নাকি ওই সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকবে— এ প্রশ্নে এখনো দেশের রাজনৈতিক দলগুলো থেকে শুরু করে জনগণের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন থেকে শুরু করে নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচন আয়োজনের পদ্ধতি প্রসঙ্গে এসব প্রশ্নের মীমাংসা না করা পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাওয়া সমীচীন হবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য।

নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের পরামর্শ বিদায়ী সিইসিরও

বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেছেন তার বিদায়ী বক্তব্যে। নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকে তিনি বলেন, জনগোষ্ঠীর সমরূপতার (হোমোজেনিটি) কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয় ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে। সেই সঙ্গে নির্বাচন চার বা আটটি পর্বে আয়োজন করা যেতে পারে। প্রতিটি পর্বের মাঝে তিন থেকে পাঁচ দিনের বিরতি রেখে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের সুপারিশ করেছেন তিনি।

সদ্য সাবেক সিইসি আরও বলেন, তাদের প্রবর্তিত অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল অব্যাহত রেখে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহার অপটিমাইজ করতে পারলে উত্তম হবে। প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আয়োজন করা হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরও সুনিশ্চিত হতে পারে।

নির্বাচন পদ্ধতির মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, বিদ্যমান ব্যবস্থায়, আমাদের বিশ্বাস, কেবল কমিশনের পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে অবাধ ও নিরপেক্ষ, কালো টাকা ও পেশীশক্তি বিবর্জিত এবং প্রশাসন-পুলিশের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন নিশ্চিত করা যাবে না। নির্বাচন পদ্ধতিতে দুর্ভেদ্য মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও আচরণে এবং বিশেষত প্রার্থীদের আচরণে পরিবর্তন প্রয়োজন হবে।

সারাবাংলা/টিআর

ইসি নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন আইন নির্বাচন পদ্ধতি নির্বাচনব্যবস্থা সার্চ কমিটি সিইসি

বিজ্ঞাপন

আজ সশস্ত্র বাহিনী দিবস
২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৬

আরো

সম্পর্কিত খবর