Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুর বিভাগে অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ে বেড়েছে দুর্ভোগ

রাব্বি হাসান সবুজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৯

রংপুর: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে রংপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর সঙ্গে অন্যান্য বিভাগের মতো রংপুর বিভাগেও গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র লোডশেডিং। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় করতে হচ্ছে লোডশেডিং। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে বেড়েছে যেমন ভোগান্তি, তেমনি অসুস্থ হচ্ছেন বৃদ্ধ থেকে শিশু সব বয়সী মানুষ। অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বিদ্যুৎ নির্ভর কলকারাখানা ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

‘বিদ্যুৎ যাওয়া মাত্রই গরমে কোলের শিশু কেঁদে উঠছে। সারাদিনে ১২-১৫ বার বিদ্যুৎ যায়; গেলেই ১ থেকে দেড় ঘণ্টা পর আসে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ায় খুব বিপদে আছি। ছোট বাচ্চারা তো বুঝতে চায় না সারাদিন কান্নাকাটি করে’— কথাগুলো বলছিলেন রংপুর নগরীর স্টেশন রোডের গৃহিনী সুমি আকতার।

সুমি আকতারের মতো একই অবস্থা নগর রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার প্রায় ১ কোটি গ্রাহক বাসিন্দাদের। সর্বত্র লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে সব বয়সী মানুষের। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুতের যাওয়া-আসার কারণে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জনমনে। লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়ায় রংপুরের মানুষ বলতে শুরু করেছে, ‘এখানে বিদ্যুৎ থাকে না, মাঝে মাঝে আসে।’

গত দুই সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। দিনে ১০-১২ বার করে যাওয়া-আসা করছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, কোথাও কোথাও ২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। এমনিতেই ভ্যাপসা গরম, তার ওপর বিদ্যুতের এমন যাওয়া-আসায় বিরক্তি সৃষ্টি হচ্ছে জনমনে।

বিদ্যুৎ অফিস জানায়, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ও নেসকো মিলে চাহিদা এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট। সেখানে মিলেছে ৮০০ মেগাওয়াটেরও কম। চাহিদার তুলনায় ঘটতি ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি।

রংপুর বিদ্যুৎ বিভাগের নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) সূত্র বলছে, জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। অবস্থা স্বাভাবিক হতে কত দিন সময় লাগবে তা জানাতে পারেননি কোনো কর্মকর্তা।

রংপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন জানান, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে। অবস্থা উত্তরণে চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

নগরীর পার্কের মোড় এলাকার গ্রাহক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ বার লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ একবার গেলে দেড় ঘণ্টার আগে কখনই আসেনা। প্রচণ্ড গরমে ঘরে থাকা যায় না আর বাইরে গেলে তাপদাহে অবস্থা খারাপ।’

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার গ্রাহক মাহমুদুন্নবী সরকার বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে। দিনে ১০-১২ বার করে যাওয়া-আসা করছে। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে, কোথাও কোথাও ২ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। এমনিতেই ভ্যাপসা গরম, তার ওপর বিদ্যুতের এমন যাওয়া-আসায় বিরক্তি সৃষ্টি হচ্ছে।’

চলমান পরিস্থিতিতে সারা দেশের মধ্যে রংপুর বিভাগেই সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে, যা এখন অসহনীয় পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এর প্রভাব ছোট-বড় কলকারখানা ও ব্যবসায়েও পড়তে শুরু করেছে। ব্যাঘাত ঘটছে উৎপাদন কার্যক্রমে।

নীলফামারীর সৈয়দপুরের কারাখানা মালিক শাহীন আলম বলেন, ‘এলাকায় ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ায় কলকারখানায় ঠিকমতো কাজ হচ্ছে না। ওয়ার্কিং আওয়ারে শ্রমিকদের ৩-৪ ঘণ্টা শ্রমিকরা বেকার বসে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।’

লোডশেডিংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুদের। প্রচণ্ড গরমে বাড়ছে মৌসুমি জ্বর-সর্দি ও অন্যান্য অসুস্থতা। দ্রুত লোডশেডিং বন্ধ করাসহ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাসিন্দারা।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৪-৩৭ ডিগ্রিতে ওঠা-নামা করছে। আপাতত এ অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’

সারাবাংলা/এমও

রংপুর বিভাগ লোডশেডিং

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর