কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি, গুম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু ১৫ সেপ্টেম্বর
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:২৫
ঢাকা: বিগত সরকারের আমলে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে তদন্ত করতে এরই মধ্যে কমিশন গঠন করেছে সরকার। সেই কমিশন এবার গুমের তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বলেছে, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনের কাছে গুমসংক্রান্ত তথ্য দেওয়া যাবে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে ইমেইল, ডাক বা সশরীরে কমিশনের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ বা তথ্য জানাতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বরর) গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনের সংযুক্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ বুলবুল হোসেনের সইয়ে এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কমিশন। এতে বলা হয়েছে, কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে ০১৭০১৬৬২১২০ ও ০২৫৮৮১২১২১ হটলাইন নম্বরে বা [email protected] ইমেইল ঠিকানায়।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গুমের ঘটনায় ভিকটিম নিজে অথবা তার পরিবারের কোনো সদস্য বা স্বজন অথবা গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কমিশনে সশরীরে হাজির হয়ে বা ডাকযোগে কিংবা কমিশনের ইমেইল ঠিকানায় অভিযোগ দিতে পারবেন। প্রতি কর্মদিবস সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লিখিতভাবে অভিযোগ দাখিল করা যাবে। এই সময়সূচি অনুযায়ী অভিযোগ দাখিলের জন্য হটলাইন নম্বর ব্যবহার করে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।
আরও পড়ুন-
- গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে সই করল বাংলাদেশ
- গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে গণবিজ্ঞপ্তি জারির সিদ্ধান্ত
- ১৬ বছরের গুমের ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিশন গঠন
- গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিতসহ ১২ দাবি সিএআই’র
- গুমসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করায় বাংলাদেশকে স্বাগত
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি অভিযোগনামায় অন্যান্য তথ্যসহ অভিযুক্ত গুমের ঘটনার সুনির্দিষ্ট বিবরণ, ঘটনার স্থান, তারিখ ও সময়, অভিযোগকারী ও তার মা-বাবার নাম, ভিকটিমের নাম ও তার মা-বাবার নাম, ভিকটিমের সঙ্গে অভিযোগকারীর সম্পর্ক, অভিযোগকারী ও ভিকটিমের ডাক ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ইমেইল এবং অভিযুক্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি-সংস্থার নাম-ঠিকানা ইত্যাদি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
অভিযোগনামায় বর্ণিত গুমের ঘটনার সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণা, সাক্ষীদের নাম-ঠিকানার তালিকাসহ অভিযোগকারী ও ভিকটিমের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করতে বলেছে কমিশন। আরও বলেছে, পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনে অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংস্থার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে গুম করা হয়েছে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গোপন টর্চার সেলে বছরের পর বছর আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই গুমের এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে।
সরকার গঠনের তিন সপ্তাহের মধ্যে গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করে সরকার। এ ছাড়া জাতিসংঘের গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার (পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সিআইডি, বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, এনএসআই, ডিজিএফআই, কোস্টগার্ড) কোনো সদস্য দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকার এই কমিশন গঠন করেছে।
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন— হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
আরও পড়ুন-
- আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস শুক্রবার
- সন্তান জীবিত ফেরত চেয়ে সংবাদ সম্মেলন
- গুমের অভিযোগে ৯ বছর পর ৭ জনের নামে মামলা
- গুমের অভিযোগে র্যাবের ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন
- ‘আ.লীগ সরকারের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবার মামলা করতে পারেন’
সারাবাংলা/টিআর