নার্সদের ১ দফা পূরণ না হলে দেশব্যাপী কর্মবিরতির ঘোষণা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০১
ঢাকা: নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সকল পরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্টারের অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে নার্সিং সংস্কার পরিষদ। এর পাশাপাশি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্স কর্মকর্তাদের পদায়ন করার দাবিও জানিয়েছে নার্সিং সংস্কার পরিষদ।
এই এক দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। দাবি পূরণ না হলে সংগঠনটি আরও বৃহৎ কর্মসূচি দেওয়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী সব হাসপাতালে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নার্সিং সংস্কার পরিষদ।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির মিডিয়া উইংয়ের সমন্বয়ক সাব্বির মাহমুদ তিহান সারাবাংলাকে এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের দাবি একটাই, তা হলো নার্সদের প্রতিষ্ঠান নার্সদের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে। নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সকল পরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্টারের অপসারণ দাবি জানিয়ে আমরা আন্দোলন করছি। এর পাশাপাশি এই সব পদে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়ন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে আমাদের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনের পাশাপাশি প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। আগামীকাল দুপুর ১২ টায় নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহৎ কর্মসূচি ও প্রয়োজনে দেশব্যপী সব হাসপাতালে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে।’
নার্সিং সংস্কার পরিষদের পক্ষে সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, ‘বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে নার্সদের যৌক্তিক দাবিগুলো আদায়ে কেউ সাড়া দেয়নি। আর তাই নার্সিং পেশা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই দিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর নার্সদের পদ-পদবি ও পদোন্নতি বঞ্চিত রাখা হয়েছে। দীর্ঘ বছর নার্সিং পেশায় অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগ বিধি বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তৎকালীন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা।’
তিনি বলেন, ‘অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগ বিধি নেই এই দোহাই দিয়ে সর্বশেষ গত আট বছর ধরে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর ও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল দখল করে রেখেছে প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা। নন-নার্সিং কর্মকর্তা হয়েও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক পদ দখল করেছে প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা। এছাড়াও বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এর রেজিস্টার ও প্রেসিডেন্ট পদ দখল করেছে আমলারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমলাদের এমন স্বৈরাচারী চক্রান্তে নার্সিং পেশা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দখলদার আমলাদের কারণে নার্সিং একটি শ্রেষ্ঠ ও জনমুখী পেশা হলেও এখনও এই পেশা আলোর মুখ দেখেনি। সামাজিকভাবে এই পেশা আজও ছোট করে দেখা হয়। অথচ স্বাস্থ্যখাতের হৃৎপিণ্ড বলা হয় নার্সদের। কিন্তু দখলদারদের কারণে নার্সিং পেশা ফ্রন্টলাইনে আসতে পারেনি।’
‘আর তাই বর্তমানে দেশজুড়ে যে সংস্কার চলছে তারই অংশ হিসেবে আমরা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরেও সংস্কার চাই আর তাই আমরা আন্দোলন করছি’— যোগ করেন সাব্বির মাহমুদ তিহান।
এর আগে, ৮ সেপ্টেম্বর নার্সিং শিক্ষার্থী ও নার্সিং পেশা নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাকসুরা নূরসহ প্রতিষ্ঠানটির সব পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এ দাবিতে বিক্ষোভের পাশাপাশি সড়কও অবরোধ করেন। তারা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের ডিজি মাকসুরা নূরের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
জানতে চাইলে এ দিন সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, ‘নার্সদের বদলিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলতে গেলে মহাপরিচালক মাকসুরা নূর নার্সদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেন। এ সময় আমাদের একজন নার্স বলেন, আগে আমরা বদলি নিয়ে কথা বলতে পারতাম না। কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। এখন তো স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারি। এ সময় মহাপরিচালক ধমক দিয়ে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যান এবং বলতে থাকেন, ‘কীসের স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেন? কীসের আবার স্বাধীনতা?”
তিনি বলেন, “একপর্যায়ে নার্সদের উদ্দেশে মহাপরিচালক বলেন, ‘আপনারা ছোট চাকরি করেন। এখন আপনারা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েছেন। শেখ হাসিনা যে আপনাদের দ্বিতীয় শ্রেণি করছেন, এটাই সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।’ আমরা মনে করি, তার এই বক্তব্যে নার্স ও নার্সিং পেশাকে মারাত্মকভাবে হেয় করা হয়েছে, যা নার্সিং সমাজকে ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ করে তুলছে।”
আরেক শিক্ষার্থী মাহফুজ আহমেদ জানান, বিভিন্ন দাবি নিয়ে তারা সোমবার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সে সময় মহাপরিচালক তাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন।
মাহফুজ বলেন, ‘তিনি (নার্সিং ডিজি) আমাদের নিয়ে, আমাদের পেশা নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেছেন। এ জন্য আজ আমরা তার কাছে এর ব্যাখ্যা চাইতে এসেছিলাম। এসে দেখি তিনি অফিসে নেই। তার পদত্যাগের দাবিতে আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি।’
পরবর্তীতে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সকল পরিচালক, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্টারের অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে নার্সিং সংস্কার পরিষদ।
সংগঠনটি জানায়, ১১ সেপ্টেম্বর নার্সিং প্রতিনিধিদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত সভায় দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলে রেজিস্টার পদে পুনরায় নন-নার্সিং প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়। এই পদায়ন চলমান আন্দোলনকে উসকে দেয়ার শামিল এবং নার্সিং সমাজ তা ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করে বলে দাবি নার্সিং সংস্কার পরিষদের।
এর প্রতিবাদে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেশজুড়ে বাংলাদেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান (মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) ও সকল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে নার্সিং সংস্কার পরিষদ।
নার্সদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক মাকসুরা নূরের মোবাইলে ফোন দিলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম