জনপ্রশাসনের বঞ্চনা প্রতিকার কমিটিতে হাজারও আবেদন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৫৭
ঢাকা: ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত প্রশাসনের সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় এক কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রমার্জন সাপেক্ষে গ্রেড-৩ থেকে গ্রেড-২ এ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আর তাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীরও অনুমোদন ছিল। সেই অনুমোদনের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু তারপরও ওই কর্মকর্তাকে গ্রেড-২-এ উন্নীত করা হয়নি। এরপরেও বেশ কয়েকটি এসএসবি বৈঠকে তার গ্রেডের বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও গ্রেড-৩ নিয়েই তাকে অবসরে যেতে হয়।
জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে খাদ্য ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে। গত ১৫ বছরে প্রশাসনে নানাভাবে এমন বঞ্চনার শিকার হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার এসব কর্মকর্তাদের প্রতিকার দিতে উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এদিকে, এই ঘোষণা দেওয়ার পর পরই হাজারও আবেদন জমা পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ সব আবেদন যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের প্রতিকার দিতে একটি কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সাবেক অর্থসচিব ও বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক জাকির আহমেদ খানকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগ এই তিন বিভাগের তিন জনকে সদস্য নির্ধারণ করে গত সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে চাকরিতে নানাভাবে বঞ্চনার শিকার এবং এই সময়ের মধ্যে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে কমিটি।
কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়, কমিটি আবেদন পেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিতে পারবে এবং প্রতিকারের বিষয়ে সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বা একসঙ্গে দাখিল করতে পারবে। আদালতের সুস্পষ্ট আদেশ রয়েছে, এমন বিষয় কমিটির আওতাবহির্ভূত থাকবে। কমিটি অনধিক তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেবে। আর এ কমিটিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সাচিবিক সহায়তা দেবে।
কমিটির জন্য একটি দফতর ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস সাপোর্টও দেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কমিটি প্রধানের জন্য যানবাহনেরও ব্যবস্থা করবে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া এসএসবি সভার সদস্যরা প্রতি সভার জন্য যেভাবে সম্মানী পেয়ে থাকেন, এই কমিটির সদস্যরা একই খাত থেকে সমপরিমাণ সম্মানী পাবেন বলে উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক হাজার আবেদন জমা পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। সিনিয়র সচিব বরাবর সংশ্লিষ্ট তথ্য সংযুক্ত করে তারা আবেদন করছেন। এমন একজন আবেদনকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে পদোন্নতি পাওয়ার কথা থাকলেও কয়েক দফা জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে জুনিয়র কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতি পাওয়ার মাপকাঠিতে প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকার পরও আমাকে বৈষম্যমূলকভাবে সচিব ও সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো কারণও অবহিত করা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ সব আবেদন যাচাই-বাছাই করার জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে সবধরনের সহায়তা করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।’
সরকারি চাকরিতে গ্রেড উন্নীত করা এবং বদলির পাশাপাশি পদোন্নতি একটি স্বাভাবিক ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার যখন নিয়মের ব্যতয় ঘটে তখন স্বাভাবিকভাবেই অনেকে বঞ্চিত হোন। আর এতে জনপ্রশাসনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সেই অসন্তোষে সরকারের দৈনিন্দন কাজে বিঘ্ন ঘটে।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বদলী, পদোন্নতি এক সময় মন্ত্রী, এমপিদের ডিও লেটার কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। মুখ্য হয়ে উঠেছিল দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ও পক্ষপাতিত্ব। আর এতে জনপ্রশাসনে নানামুখী সংকটের সৃষ্টি হয়। এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে যাতে সৃষ্টি না হয় সে উদ্দেশ্য নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম