Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্যোগ কাটিয়ে কুয়াকাটায় কৃষকদের ভরসা আমনেই

মনিরুল ইসলাম, লোকাল করেসপন্ডেন্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০৮

কুয়াকাটার জমিতে আমনের চারা রোপণ শেষ হয়ে এসেছে। ছবি: সারাবাংলা

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী): প্রকৃতি এবার ছিল বৈরী। ঘূর্ণিঝড়ের পাশাপাশি মৌসুমি বায়ু আর নিম্নচাপের প্রভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ঝরেছে বৃষ্টি। তাতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দেরি হয়েছে। তবে আমনের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়নি। দেরিতে হলেও আমনের চারা রোপণ শেষ করে এনেছেন পটুয়াখালীর কৃষকরা। জেলার দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত এখন আমনের চারার সবুজ রঙে ঝলমল করছে। সার ও কীটনাশক বেশি দামে বিক্রি করা হলেও কৃষকরা আমন ধানের বাম্পার ফলনে আবাদের খরচ পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কৃষি অফিস বলছে, এ বছর কলাপাড়া উপজেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৭০০ হেক্টর। এরই মধ্যে ২৫ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ শেষ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বাকি জমিগুলোতেও আমনের রোপণ শেষ হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, কলাপাড়ায় এ বছর উফশী জাতের উচ্চ ফলনশীল আমন ধান বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩, স্বর্ণমুশুরি, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫১ ও ব্রি ধান ৫২ চাষ হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ জমিতে। এ ছাড়া স্থানীয় জাতের সাক্ষরখানা, রাজাশাইল, কাজল শাইল, বিংগা মনি, সাদা মোটা, মাথা মোটা ও কুটি অগ্রানি জাতের আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষক।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ উপজেলা কুয়াকাটায় প্রতিবছরই আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কৃষকরাই বলছে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ আমনের বাম্পার ফলনে বড় ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের দাবি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে রয়েছে কৃষি বিভাগ। কৃষককে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনার বীজ, সার। কৃষকের চাষাবাদ সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে অবস্থান বাধ্যতামূলক।

বিস্তীর্ণ জমি সবুজ হয়ে আছে আমনের রঙে। ছবি: সারাবাংলা

কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-পরবর্তী প্রয়োজন কর্মসূচির আওতায় উপকূলের এক ৮৯০ জন কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে জনপ্রতি পাঁচ কেজি ধান বীজ ও ২০ কেজি রাসায়নিক সার বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১২০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে ছয় হাজার পিস নারিকেল চারা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষককে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করতে চাষাবাদের জন্য ট্রাক্টর, কীটনাশক স্প্রে করার জন্য স্প্রে মেশিন, ফুট পাম্প, ধান কাটার জন্য হারভেস্টার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের বিশকানি এলাকার কৃষক নসু সিকদার বলেন, এ বছর ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব শেষ হতে না হতেই একের পর এক নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিসহ অতিরিক্ত বৃষ্টিতে আমনের বীজতলা পচে গেছে। নতুন করে বীজতলা তৈরি করে আবার ধানের চারা করতে হয়েছে।

ধূলাসার ইউনিয়নের নতুনপাড়া এলাকার কৃষক ইদ্রিস গাজী (৫৫) বলেন, এ বছর একর প্রতি জমি চাষাবাদে খরচ পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। এখন জমির আগাছা নিধনসহ সার ও কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

ইদ্রিস গাজী আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার ও কীটনাশক বিক্রি করছেন ডিলাররা। চাপলি বাজারের খুচরা ডিলারের দোকান থেকে প্রতি বস্তা টিএসপি সার কিনতে হয়েছে ১৮০০ টাকা, ইউরিয়া ১৪০০ টাকা এবং ডিএপি সার ১২০০ টাকা। কীটনাশকের দামও বেশি নিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছেন। আমি নিজেও প্রতিদিন একটি করে গ্রামে গিয়ে পরিদর্শনসহ কৃষকের সঙ্গে কথা বলছি। কৃষকরা যেকোনো সমস্যার কথা বললে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।

সার-কীটনাশকের দাম নিয়ে আরাফাত হোসেন বলেন, সার ডিলারদের অফিস থেকে তদারকি করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/টিআর

আমন ধান আমনের আবাদ কুয়াকাটা পটুয়াখালী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর