Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাঁচানো গেল না বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ স্কুলছাত্র রাতুলকে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৭

ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের পরে বগুড়া শহরের বড়গোলা এলাকায় ছাত্রজনতার মিছিলে যোগ দিয়ে ছিল ১২ বছর বয়সী জুনায়েদ ইসলাম রাতুল। বগুড়া উপশহরের পথ পাবলিক স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল মিছিলের সঙ্গে পৌঁছায় বগুড়া সদর থানার অদূরে ঝাউতলার কাছে। বিকেল সাড়ে ৪টার সময় বগুড়া শহরের বড়গোলা ঝাউতলা এলাকায় এলে থানার মোড় রেল লাইন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও গুলি ছুঁড়তে থাকে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয় রাতুল। তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলে সেখানে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর এই বিশেষায়িত হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল রাতুল। তবে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দীর্ঘ এক মাস ১৯ দিন পর মারা গেলো জুনায়েদ ইসলাম রাতুল।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রাতুল। সারাবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাতুলের বাবা জিয়াউর রহমান। তিনি বগুড়া পৌরসভার সুলতানগঞ্জপাড়া ঘোনপাড়া হাকিরমোড় এলাকার একজন মুদি দোকানদার। রাতুলের মায়ের নাম মোছা. রোকেয়া বেগম।

আরও পড়ুন: সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিশু শিক্ষার্থী

জিয়াউর রহমান বলেন, একটি এনজিও পরিচালিত ‘পথ’ নামক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো রাতুল। ৫ আগস্ট সকালে নাশতা না করে মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও বোন জেরিন সুলতানা ও ভগ্নীপতি আমির হামজার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যায় রাতুল। একসময় মিছিল নিয়ে তারা বগুড়া সদর থানার অদূরে ঝাউতলার কাছে পৌঁছায়। এরপর আমার ছেলেটা আর আমার সঙ্গে কথা বলে নাই। সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে লড়তে আজ ভোরে মারা গেছে।

তিনি বলেন, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল থেকে রাতুলের মরদেহ জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। সেখানে জানাজা শেষে রাতুলের মরদেহ নেয়া হবে বগুড়া শহরের হাকির মোড় এলাকার বাসায়। পরে স্থানীয় সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে নামাজগড় গোরস্থানে দাফন করা হবে।

রাতুলের বড় বোন জেরিন জানান, সেদিন বিজয় মিছিলে হঠাৎ করেই গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় রাতুলের মাথায় চারটি ছররা গুলি লাগে। এরমধ্যে একটি গুলি বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। এরপর আরও অসংখ্য গুলি লাগে শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। তাকে অজ্ঞান অবস্থায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে নিয়ে যাই। চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতলে নিতে বলেন। পরে ঢাকায় নেওয়ার পর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। মগজের ভেতর থেকে একটি গুলি বের করেন চিকিৎসকরা। রাতুলের জন্য কৃত্রিমভাবে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

এর আগে, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন রাতুল বেঁচে ফিরলেও চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তাকে বাঁচানো সম্ভব হলো না।

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

সারাবাংলা/এসবি/এনইউ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর