আশ্বিনের বৃষ্টিতে ভিজছে দেশ, জল-জটে একাকার ঢাকা
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩
ঢাকা: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দুই দিন ধরে অঝরে ঝরছে বৃষ্টি। বুধবারের বৃষ্টি তেমন ভোগান্তি না বাড়ালেও বৃহস্পতিবারের (২৬ সেপ্টেম্বর) বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষদের কারও কারও দুই দিন ধরে ব্যবসা ও কাজকর্ম বন্ধ।
এদিকে, সপ্তাহের শেষ দিন বৃষ্টিতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে আরও দুই দিন।
এদিন রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন সড়কে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, গুলিস্তান, শান্তিনগর মৌচাক, বাড্ডা, বনানী, ফার্মগেট, শাহাবাগ, মিরপুর রোডেও যানজটের তথ্য পাওয়া গেছে।
কাকরাইল মোরে ভিক্টর পরিবহনের চালক জসিম উদ্দিন জানান, বৃষ্টির কারণে যাত্রী কমলেও যানজট বেড়েছে। অন্য দিনগুলোর চেয়ে আজ বেশি সময় লাগছে গন্তব্য পৌঁছাতে।
সিএনজি আটোরিকশার চালক ফোরকান বলেন, ‘ইঞ্জিনে পানি ঢুকে সিএনজি এক ঘণ্টা ধরে কাকরাইল মোড়ে পড়ে আছে। বৃষ্টি কমলে এটাকে টেনে গ্যারেজে নিতে হবে। ইনকাম তো দূরের কথা আজ লোকসান গুনতে হবে দ্বিগুণ।’
তবে রিকশাওয়ালাদের দিন ছিল ভালো। তারা বলছেন, বৃষ্টিতে খ্যাপ কম, ইনকাম বেশি। তবে বৃষ্টির কারণে সারাদিনই ভিজতে হলো। এতে জ্বর হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে, বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা। অনেক স্কুলের সামনে পানি জমে যাওয়ায় তাদের ভ্যানে করে পার হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এই পরিস্থিতি শুক্রবারও (২৭ সেপ্টেম্বর) অব্যাহত থাকতে পারে।
শুক্রবারের পূর্বাভাস বলছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইনঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে।
আর শনিবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। ওই দিনও সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে, শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাফায় অবস্থানরত লঘুচাপটি পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে এবং মৌসুমি অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ মধ্য প্রদেশ, উড়িষ্যা, গাঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।’
তিনি জানান, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় হয়েছে। যে কারণে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, যশোর, বরিশাল, পাটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর (পুন.) ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তবে সমুদ্র বন্দরগুলোকে দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম