সংস্কারে বেশি সময় নয়, ২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চায় গণতন্ত্র মঞ্চ
৫ অক্টোবর ২০২৪ ০০:১৬
ঢাকা: নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে পাঁচটির সদস্যদের নামসহ কমিশনগুলো গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। জানা গেছে, কমিশনগুলো ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। তারপর পরামর্শমূলক মতবিনিময় হবে। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাবে সরকার। তারই অংশ হিসেবে শনিবার (৫ অক্টোবর) গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গণতন্ত্র মঞ্চ সংলাপে অংশ নিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবে। এই জোটটির নেতারা মনে করেন, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো দ্রুতই তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। তবে তারা যদি সবকিছু সংস্কার করতে চায় দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। তারা কেবল নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন পদ্ধতি ও পুলিশবাহিনীসহ যেসব কালো অধ্যায় আছে যেগুলো সংস্কার করতে পারে। কিন্তু সংবিধানসহ এ সংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় সংস্কার প্রয়োজন তা কেবল জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেই সংসদে পাস করতে হবে। সেজন্য অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের।
গণতন্ত্র মঞ্চের একাধিক নেতা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে; জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই; মব জাস্টিস বন্ধ করতে পারিনি। এ ছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা লেগেই আছে; প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় বিশৃঙ্খলা; প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে কচ্ছপ গতিতে; মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা। অন্তর্বতী সরকারের কাছে জনগণের যা প্রত্যশা ছিল তা পূরণ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনগুলো নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন সংস্কার করে ঢেলে সাজাতে পারে। কিছু কিছু সংস্কার আছে, তারা সুপারিশ করলে নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন হতে পারে। এসব কাজ শেষ করতে দুই বছরের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তাই ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা এবং নির্বাচন করে নতুন জনপ্রতিনিধি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে সরকার প্রশংসিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা সংলাপে বসবে। আমরা সরকারের কথা শুনব। আমাদের কথাও সরকারকে জানাব। এ সময় নির্বাচনের রোড ম্যাপের বিষয়টি তুলে ধরা হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, কাজের সিদ্ধান্তহীনতা ও মব জাস্টিস বন্ধ করতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। কিন্তু সরকার আমাদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারছে না। ফলে প্রশাসন চলছে কচ্ছপ গতিতে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে ব্যর্থতার কথাগুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের সময়-সীমা নিয়ে কথা বলব। আমরা নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ চাইব।’
সংলাপ প্রসঙ্গে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় নির্বাচনের রোড ম্যাপের বিষয়টি উঠে আসবে। আলোচনার মাধ্যমেই রোডম্যাপ ঠিক করা হবে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনি রোড ম্যাপের বিষয়টি উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘সেনাপ্রধান ১৮ মাসের কথা বলেছেন। আমরা দুই বছর সময় দেবো।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম