নির্বাচনের রোড ম্যাপ দিতে বলেছি: মির্জা ফখরুল
৫ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০৭
ঢাকা: প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনসহ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে বসে এ আহ্বান জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন স্থগিত করে প্রধান রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আমরা একটা রোড ম্যাপ দিতে বলেছি। নির্বাচন কমিশন কবে নির্বাচন করবে সে ব্যাপারে একটা রোড ম্যাপ দিতে হবে।’
এর আগে, দুপুর আড়াইটায় বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল হেয়ার রোডে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে প্রবেশ করেন। এক ঘণ্টা বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ছয় সদস্যের বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সংলাপ শেষে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এনআইডি কার্ড যেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যাস্ত করতে আইন করা হয়েছিল সেটাকে অডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাতিল করতে বলেছি। বিতর্কিত কোনো ব্যক্তি যাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশনে না যায় সেকথা আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। আমরা বলেছি যে, ফ্যাসিস্ট সরকারের ভুয়া ভোটে নির্বাচিত সব ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করতে হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যেসব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনার ছিলেন, তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান উনাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তারা দেখছেন। তারা মনে করেন আমাদের দাবিগুলো জনগণের দাবি, তাদেরও দাবি।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে সংবিধান ধ্বংস ও তত্ত্বাধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের ‘মূল হোতা’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারের মধ্যে দুয়েকজন আছেন যারা বিপ্লব-গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট ব্যাহত করছেন। তাদের সরানোর কথা বলেছি। আমরা গত ১৫ বছর ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি নিশ্চিত করার জন্য বলে এসেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আামরা বলেছি যে, বিচার বিভাগের হাইকোর্ট বিভাগে এখন পর্যন্ত পরিবর্তন হয়নি। হাইকোর্ট বিভাগে বেশির ভাগ নিয়োগই ছিল দলীয় ভিত্তিতে এবং প্রায় ৩০ জন বিচারক বহাল তৈবিয়তে কাজ করছেন এখনও। এদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। দলকানা কিছু বিচারক আছেন তাদের অপসারণের কথা বলেছি। একইসঙ্গে অতি দ্রুত পিপি ও জিপি নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে, দুর্নীতি অথবা হত্যায় সুনির্দিষ্ট মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। এই বিষয়টা আমরা দেখার জন্য বলেছি। ২০০৭ সালে থেকে শেখ হাসিনার শাসনামলে সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুনতে পাই, সাবেক মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কীভাবে পালিয়ে যাচ্ছে, কার সহযোগিতায় পালাচ্ছে, এই বিষয়গুলো দেখার জন্য বলেছি। শেখ হাসিনা ভারতে আছেন। ভারতে থেকে তাকে কেন্দ্র করে, তার মাধ্যমে যে সমস্ত ক্যাম্পেইন চলছে, যে সমস্ত অপপ্রচার চলছে সে বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এবং তাকে ওই অবস্থা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিরতার সৃষ্টি পেছনে কারা আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি। এ ছাড়া জাতিসংঘের একটি দল এসেছে বাংলাদেশে। যারা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে জড়িত আছেন, তারা জাতিসংঘের টিমকে সেভাবে সহযোগিতা করছেন না। বিষয়টি আমরা কথা বলেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সম্প্রতি দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে কিছু মানুষ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জনগণকে উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। হিন্দু কমিউনিটির ওপর নির্যাতন হচ্ছে ইত্যাদি কথা বলছে- যা সর্বৈব মিথ্যা। এটা তাদের সূদূর পরিকল্পনা, সে বিষয়ে আমরা বলেছি, এই কথাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বলেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’