মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে
৬ অক্টোবর ২০২৪ ১১:০৩ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪৩
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। একইসঙ্গে নির্বাচিত সরকার ছাড়া সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাবে না বলেও জানানো হয়। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।
শনিবার (৫ অক্টোবর) বিকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে জোটের নেতারা এসব কথা বলেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বাম জোটের নেতাদের বলেছেন, সংস্কার কমিটির সঙ্গে আপনারাও বৈঠক করবেন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা করা হবে। এরপর সকল রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। তবে কবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি প্রধান উপদেষ্টা।
জোটের নেতারা বলেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে বাজার ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। পাঠ্যক্রম সংশোধন কমিটি নিয়ে যে ধরনের ঘটনা ঘটলো তা কোনভাবেই কাম্য নয়। ইতিহাসের শিক্ষা এই যে, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রশ্রয় দিলে দেশের জনগণের মধ্যে সংহতি বিনষ্ট হয়। তার বলেন, কমিশনের প্রধানদের নিয়ে, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধান নিয়ে বিতর্ক এবং সন্দেহ অনভিপ্রেত। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংবিধান যতটুকু সংশোধন দরকার, ততটুকু সংশোধন করার উদ্যোগটাই যথার্থ হবে বলে আমরা মনে করি।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মাসুদ রানা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ্ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু,বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ঘটনা জনগণের মধ্যে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বেশকিছু ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে- এটা মত প্রকাশের অধিকারের উপর আক্রমণ। মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাকে বিতর্কিত করা, ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে গোষ্ঠীর স্বার্থে সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তোলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান করার মাধ্যমেও গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আরও গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি।
নেতারা বলেন, স্বল্প মজুরি, বকেয়া মজুরি, বন্ধ কারখানা নিয়ে অনিশ্চয়তা- শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের জন্ম দিয়েছিল। আমাদের আশঙ্কা, মালিকপক্ষের চুক্তি না মানার প্রবণতাসহ সমস্যার যথাযথ সমাধান না হলে আবার সংকট তৈরি হতে পারে। মজুরি সংক্রান্ত বিষয়ে শ্রমিক পক্ষের মতামত নিয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। শ্রমিকদের উপর নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ আমাদের কাম্য নয়। শ্রমিকদের উপর গুলি চালানোর ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আহতদের কোনো অঙ্গহানি হলে তার জন্য আলাদা ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করতে হবে। এ সকল ঘটনায় দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। এগুলো আইনের শাসন ও মালিকদের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হবে। শ্রমিকের সমস্যা সমাধানে আলোচনাকে প্রাধান্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে নানা ধরনের ব্যবসার দখল পাল্টা দখল নিয়ে যারা সংকট সৃষ্টি করতে চায়, তাদের বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইআ