রাজশাহীর মণ্ডপে মণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি, তুলির আঁচড়ে সাজছে প্রতিমা
৭ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৫
রাজশাহী: মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে ঘটা করে শুরু হয় দুর্গাপূজা। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা কড়া নাড়ছে দুয়ারে। আর মাত্র দুইদিন পরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন প্রতিমাগুলো রঙিন করার কাজে ব্যস্ত প্রতিমাশিল্পীরা। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষ্মী ও মহিষাসুরের প্রতিমা।
পূজামণ্ডপকে পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক রূপ করে ভক্ত-দর্শনার্থীদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করা কারুশিল্পীদেরও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে। পূজার প্রস্তুতির এ শেষ মুহূর্তে এখন যেন দম ফেলার সময় নেই শিল্পীদের। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পী, ডেকোরেটর এবং হিন্দুধর্মালম্বী লোকজন। পূজামণ্ডপকে ঘিরে চলছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ। এরই মধ্যে মৃৎশিল্পীরা প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন, এখন রঙ-তুলির আঁচড় দিয়ে প্রতিমা অঙ্কনের কাজ করছেন। রঙ-তুলির আঁচড়ের কাজ শেষ হলেই পোশাক-অলঙকার পরিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হবে প্রতিমাগুলোকে।
সরেজমিনে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সবত্রই চলছে পূজার জোর প্রস্তুতি। বেশির ভাগ মন্দিরের প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ। এখন প্রতিমাগুলো রঙ করার কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পী, ডেকোরেটর এবং হিন্দুধর্মালম্বী লোকজন। পূজামণ্ডপকে ঘিরে চলছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ।
রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি এলাকার প্রতিমা কারিগর কার্তিক চন্দ্র পাল বলেন, এখন থেকে প্রায় দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। প্রায় ৩০টি প্রতিমা তৈরির কাজ পাওয়া গেছে এই বছর। প্রতিমায় মাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ শেষ করে এখন রঙের কাজ চলছে। রঙের কাজ শেষ হলেই মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা পোঁছে দেওয়া হবে।
নগরীর ষষ্ঠিতলা এলাকায় প্রতিমায় রঙ-তুলির আঁচড় দেওয়ার আগে প্রতিমাগুলোকে আরও মিহি করে তুলছেন প্রতিমাশিল্পী অরুণ কুমার পাল। কাজের ব্যস্ততা নিয়ে অরুণ কুমার পাল বলেন, নিজ হাতে মনের মাধুরী মিশিয়ে মাকে তৈরির সৌভাগ্য ক’জনের ভাগ্যে হয়। মহামায়া ভগবতী মা দুর্গার আশীর্বাদেই আমি এ পেশায় এসেছি। তবে আমাদের পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয় না। যার কারণে এই পেশায় নতুন করে ছেলেরা আসতে চাইছে না।
নগরীর রাণীবাজার এলাকায় বেশ জাঁকজমকভাবে সাজসজ্জা চলছে টাইগার মণ্ডপের। রাজশাহীতে এই মণ্ডপে বিভিন্ন থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়। তবে এবারও ব্যতিক্রম না। মণ্ডপ কমিটি এখনই জানাতে ইচ্ছুক না। এই মণ্ডপের এখনও কাজ শেষ হয়নি। শেষ হবে ষষ্ঠির আগে।
নগরীর সাগরপাড়া এলাকার শিবালয় মণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক বলেন, প্রতি বছর পূজায় থিম থাকলেও এই বছর আর নেই। খুবই সিম্পল আয়োজন করা হচ্ছে এবার। আমাদের নিজস্ব ভাবে প্রতিমা তৈরি করা হয়। প্রতিমায় রঙসহ তোরণ, প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা সব কাজই শেষ হয়ে যাবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকার ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো খুবই আন্তরিক। পূজার শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাই আমাদের সহযোগিতা করবে।
রাজশাহীতে এবার ৪১২টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে মহানগরে আছে ৭৭টি মণ্ডপ। আর জেলায় ৩৩৫টি মণ্ডপে পূজা হবে। গত বছরের তুলনায় এবছর কমেছে মণ্ডপের সংখ্যা। গত বছরে পূজার ৪৬৮টি মণ্ডপে। জেলায় ৩৮৯টি ও মহানগরীতে ৭৯টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে মর্তে আগমন ঘটবে দেবী দুর্গার। ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজা এবং এর পরদিন ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী ও সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১২ অক্টোবর মহানবমী। ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যদিয়ে শেষ হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পঞ্জিকা অনুযায়ী এবার দেবী দুর্গা মর্ত্যে আসছেন দোলায় চেপে, ফিরবেন গজের (হাতি) পিঠে চড়ে।
রাজশাহী ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সরকার অসীম কুমার বলেন, পূজা চলাকালীন সময়ে ও পূজা বিসর্জনের সময় নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সব মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা থাকবে।
সারাবাংলা/ইআ