Monday 14 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বন্দরে দুর্নীতি নিয়ে বলতে গেলে সারাদিন লাগবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৪০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে সারাদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহণ এবং পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বন্দরের এনসিটি-৩ জেটিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় এ কথা জানান তিনি।

বন্দরে অনেক অনিয়ম হয়েছে জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দুর্নীতি থাকলে অবশ্যই বলবেন। এখানে অনেক অনিয়ম হয়েছে। সেটা বলতে গেলে সারাদিন লাগবে। অনেককে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তারা কারও চাচা, ভাই বা মামা। এসবই কিন্তু আমাদের নজরে আছে। এ বন্দরকে আমাদের জঞ্জাল মুক্ত করতে হবে। আর এটা যাতে কুইক রেসপন্স করতে পারে সেটার জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম পোর্ট হচ্ছে বাংলাদেশের লাইফলাইন। এ পোর্ট যদি না চলে এবং যে অব্যবস্থপনা ছিল সেটা যদি দূর না হয় আমাদের অর্থনীতির লাইফলাইনে অসুবিধা হবে। সে কারণে আমি গত তিনদিন ধরেই এ পোর্টে ঘোরাঘুরি করছি। আমরা ম্যানুয়ালি থেকে যদি অটোমেশন করতে পারি তাহলে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সময় আরও কমে যাবে। আগে একটি জাহাজ আসলে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো পণ্য খালাস করতে। এখন সেটা অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই বলে আমরা যে সন্তুষ্ট তা একদম নয়। অটোমেশন হলে কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং এর সময় আরও কমবে।

বন্দরে অন্য সংস্থাগুলোকেও কাজ করার আহ্বান জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বন্দরের অব্যবস্থাপনার জন্য সে একা দায়ী নয়। এখানে ২০ বছর আগের কনটেইনার পড়ে আছে। ১২-১৪ বছর ধরে গাড়ি পড়ে আছে। এগুলো নিলাম করার কাজ এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড)। আমি এখনও ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। জানি না তাদের সমস্যা কি। বন্দরের জায়গা যদি এভাবে ভর্তি হয়ে থাকে তাহলে কার্যক্রম কীভাবে বাড়বে। পোর্টের জায়গা যদি খালি না করে এত কনটেইনার আমরা রাখব কোথায়। ফিরে গেলে আমি এনবি আরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। শুধুমাত্র বন্দর নয়, আরও যেসব সংস্থা আছে তাদেরকেও কাজ করতে হবে। যদি কাজ না করে তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ কাজগুলো করতে পারবে না। আমাদের কাছে বিনিয়োগকারী আছে। তারা অটোমেশনে কাজ করতে চাই।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা যাবে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বে টার্মিনালের জায়গাগুলোও দেখে আসছি। আমি এ মূহুর্তে সেটা নিয়ে খারাপ-ভালো বলবো না। আমি আপাতদৃষ্টিতে বে টার্মিনালে কোনো সমস্যা দেখছি না। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য অনেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী বসে আছে। আগামী বেশ কিছু বছর পরে এ টার্মিনালের যে সম্ভাবনা সেটা দেখতে পাব। আমাদের দিনদিন আমদানি-রফতানি বাড়ছে। সেগুলোও লোড-আনলোড করতে সমস্যা হবে না। এখানে সৌদি আরব, নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ বিনিয়োগ করেছে। বিনিয়োগকে যদি আমরা নিরুৎসাহিত করি তাহলে আমাদের এখানে কিন্তু বাইরের কেউ আসবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের পোর্ট আর আমাদের বন্দরের মধ্যে কিন্তু তফাৎ আছে। তারা উম্মুক্ত। তারা অনেক এগিয়ে। বন্দরগুলোকে আমরা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারি, বন্দরের ভেতরে যে অরাজকতা ও চোরাচালান আছে সেগুলো যদি বন্ধ করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক টাকা আয় করতে পারব।

বন্দরের দুর্নীতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ব্যবস্থা বা তদন্ত করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো পোর্ট বিশেষজ্ঞ নই। আমি দেখতে এবং বুঝতে আসলাম। ২২ বছরের দুর্নীতি ২২ দিনে শেষ করা সম্ভব না। ধৈর্য ধরেন সবাই। আমরা ধীরে ধীরে সব করছি। স্থল বন্দরে আরও বেশি দুর্নীতি হয়। এখানের চেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় সেখানে। জঞ্জালগুলোকে দূর করতে একটু তো সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘মাত্র দুমাসের মাথায় ২২ বছরের পড়ে থাকা কাজ দূর করা অনেক কঠিন। যেসব যন্ত্র পড়ে আছে সেগুলোর ব্যবহার ঠিকমতো করা হবে। ২২ বছর ধৈর্য্য ধরেছেন। আরও ২২ মাস ধরেন। পরিবর্তন হয় কি না দেখেন। ‘

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকার আমলের শেষ দিকে বিদেশী বার্থ অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে বন্দরের মুনাফা বেশি হয় এবং যারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে তাদের কোনো সমস্যা না হয় তাহলে আমরা এটা চিন্তা করতে পারি। রাতারাতি এটা হবে না। প্রত্যেক স্টেপ আপনারা জানতে পারবেন। এটা নিয়ে একটি কমিটি হবে। পোর্টের জন্য যেটা ভালো হবে সেটা করা হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘২২ বছর ধরে যারা এখানে কাজ করছে তারা কারা? অন্যায়ভাবে অনেক কাজ এখানে হচ্ছে। আর কিছু বলতে চাই না। টেন্ডার এখন আর ডিপিএম পদ্ধতিতে হবে না। এখন ওপেন দরপত্র আহ্বান করা হবে। সেটা আবার আমরা রিভিউ করব। যাতে লোকাল বা বিদেশির মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট লোক যাতে না আসে।

এ সময় বন্দর চেয়ারম্যান এসএম মনিরুজ্জামান ও সচিব ওমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এসডব্লিউআর

চট্টগ্রাম বন্দর দুর্নীতি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর