এবার জেন-জি’রা ‘ফ্যাক্টর’ হতে যাচ্ছে মার্কিন নির্বাচনে
৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২৫
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে যাচ্ছে দেশটির প্রায় ৮০ লাখ তরুণ-তরুণী। তাদের বড় একটি অংশ ৩৫ বছরের কম বয়সী; যাদেরকে বলা হয় জেন-জি (জেনারেশন-জেড)। ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারণ করবে এই প্রজন্মই, যারা মোট ভোটারের এক তৃতীয়াংশ।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, নির্বাচনে এই বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটারদের আগ্রহ দেশের অর্থনীতি নিয়ে। জরিপে এসেছে, তরুণরা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি উদ্বিগ্ন।
টেক্সাসের নাগরিক ইসাবেলা (২১)। প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন তিনি। ইসাবেলা বলেন, ‘নির্বাচন কাছাকাছি চলে এসেছে। কিন্তু কোনো প্রার্থীই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো নিয়ে সেভাবে কথা বলছেন না। বাসা ভাড়ার মতো সমস্যাগুলো এত বেড়ে গেছে যে, আমরা কোনোভাবেই পেরে উঠছি না।’
বর্তমানে গাজা যুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী হয়েও তরুণদের কাছ অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো বড় বিবেচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জরিপে উঠে এসেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আয় বৈষম্যে ও দারিদ্রতার মতো বিষয়গুলো তাদের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে।
তরুণদের মতে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। মিস স্ক্যানলন (২৭) বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আজকের তরুণদের আর্থিক অবস্থা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে খারাপ। এমনকি যারা ২০০৮ সালের পরে মিলিনিয়ারের তালিকায় প্রবেশ করেছে তাদের অবস্থাও একই।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভয়গুলোই ভোটারদের ব্যালট বাক্সে নিয়ে যেতে পারে। সেন্টার ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড রিসার্চ অন সিভিক লার্নিং অ্যান্ড এনগেজমেন্টের (সিআইআরসিএলই) ডেপুটি পরিচালক অ্যাবি কিসারের প্রত্যাশা, এবারের নির্বাচনেও ২০২০ সালের মতো তরুণ ভোটারদের অর্ধেক অংশ নেবে। ওই সময় যেটি ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ। ওই বার ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তুলনায় তরুণদের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ বেড়েছিল।
মার্কিন আদমশুমারির তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ৩৫-৬৪ বয়সী ভোটারদের ৬৯ শতাংশ এবং ৬৫ ঊর্ধ্ব ভোটারদের ৭৪ শতাংশ ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেই হিসাব অনুযায়ী তরুণদের অংশগ্রহণ এখনো পিছিয়ে আছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে তরুণদের অংশগ্রহণ জয়লাভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এদিকে, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীরাও নির্বাচনি প্রচারণায় তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্বাচনে তাদের যুক্ত করতে বিভিন্ন ঘোষণাও দিচ্ছেন তারা। তরুণদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস ‘ছাত্র ঋণ মওকুফ’, ‘ভোক্তা মূল্য নির্ধারণ’ ও ‘আবাসন’র মতো অর্থনৈতিক উদ্যোগগুলো নিয়ে কথা বলছে। যেগুলো ছিল বাইডেন সরকারের সাফল্যা। এর পাশপাশি কমলা প্রথমবারের মতো বাড়ির ক্রেতাদের জন্য ২৫ হাজার ডলার ভর্তুকি এবং নবজাতকদের পরিবারের জন্য ৬ হাজার ট্যাক্স ক্রেডিট প্রস্তাব করেছেন।
অন্যদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আমলের বাজারের চিত্র তুলে ধরছেন। যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাওয়ার কথা বার বার উল্লেখ করছেন। এর মাধ্যমে তিনি তরুণদের অর্থনৈতিক অসন্তোষকে পুঁজি করার চেষ্টা করেছেন। এমনকি তিনি কমলা হ্যারিস এবং বাইডেন প্রসাশনের আগের অর্থনৈতিক রেকর্ডকে সামনে টেনে এনে আক্রমণ করেছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ভোটাররা চার বছর মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।
সারাবাংলা/এইচআই/পিটিএম